জুমবাংলা ডেস্ক : দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-আযহা। ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি বেচাকেনা। তবে হাটে বিক্রির জন্য আসা অসংখ্য গরুর মধ্যে কয়েকটি জাতের গরুর চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। চলুন চাহিদার শীর্ষে থাকা কয়েকটি গরুর জাত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
শাহীওয়াল
এই গরুর জন্ম পাকিস্তানের সিন্ধুতে। বহুদিন ধরে বাংলাদেশে এই গরু উৎপাদন করা হচ্ছে। দেখতে অনেকটা লাল রঙের, আর বেশ বড়। শাহীওয়াল জাতের গরু ধীর ও শান্ত প্রকৃতির। এই গরু আকারে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা। সাধারণত এ জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাসে লাল। তবে কখনো গাঢ় লাল বা লালের মাঝে সাদা ও কালো ছাপযুক্ত হয়।
গাভীর ওজন ৪৫০ থেকে ৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০ থেকে ১,০০০ কেজি পর্যন্ত হয়। জন্মকালে এর বাছুরের ওজন হয় ২২ থেকে ২৮ কেজি। মাথা প্রশস্ত, পা ছোট, শিং ছোট কিন্তু মোটা। গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে।
হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান
“হোলস্টাইন” অর্থ “সাদাকালো ডোরাকাটা” আর স্থানের নাম “ফ্রিসল্যান্ড”-এর সঙ্গে মিলিয়ে এই গরুর নাম হয় “হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান”। বাভারিয়া (বর্তমান জার্মানি) এবং ফ্রিসল্যান্ড (বর্তমান নর্থ হল্যান্ড) এই গরুর আদি উৎস স্থান।
ফ্রিজিয়ান জাতের গরু মাংসের জন্য পালা হয় না। কিন্তু তারপরও বাজারে মাংসের সরবরাহের বিরাট অংশই ফ্রিজিয়ান গরুর। কারণ এটি আকারে বেশ বড়। বিশ্বে যত গরু পালন করা হয়, তার ৫০%-এর বেশি ফ্রিজিয়ান জাতের। একটা হোলস্টাইন জাতের পূর্ণ বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ১,১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং উচ্চতা ৫৫ থেকে ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।
ব্রাহমা
বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু আছে, তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা বীজ বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে। শুরুতে ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টির মত জেলায় চলছে এ কর্মসূচি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, ব্রাহমা গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত। দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই। ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো, কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো। এর গায়ে চর্বি কম হয়, যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি।
প্রাণী পুষ্টি ও জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ছিল ভারতে।
সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১,০০০ কেজির বেশি হতে পারে। কোরবানির সময় বাজারে অস্বাভাবিক দাম হাঁকানো গরুগুলো মূলত এই ব্রাহমা জাতেরই গরু। দেশের কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে গবেষণা চলছে। সেগুলোর ফলাফল জানা গেলে আগামী দিনে এ জাতের গরুর উৎপাদন দেশে আরও বাড়বে।
মীরকাদিম
এই জাতের গরু দেখতে ধবধবে সাদা। কিছুটা লালচে আর আকর্ষণীয় বাঁকা শিং। বাজারে এই গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এই গরুর দাম এক লাখ ২০ হাজার থেকে শুরু হয়ে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়।
মীরকাদিমের মাংসে আঁশ কম থাকে, হাড় চিকন হয়। এই গরুর মাংস হয় নরম ও তেলতেলে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে মীরকাদিম জাতের ভালো ষাঁড়ের সংকট আছে, যে কারণে এই জাতের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ধীরে হচ্ছে। ভালো জাতের ষাঁড়ের বীজ নিয়ে এর সংকরায়নের চেষ্টা করছে সরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।