জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে র্যাবের গোয়েন্দা পরিচয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সার্জেন্ট মিজানুর রহমান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরব থেকে বিজি-৩৪০ ফ্লাইটে গত বুধবার (১৯ মার্চ) রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার জনাব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় প্রবাসী জাহাঙ্গীর ইমিগ্রেশনে যাওয়ার সময় রাতের শিফটে ডিউটিরত মিজানুর রহমান গোয়েন্দা পরিচয়ে কোনো অবৈধ মালপত্র আছে কি না, জানতে চান। তখন জাহাঙ্গীর জানান, তাঁর কাছে একটি স্বর্ণের বার আছে। ওই সময় গোয়েন্দা মিজান স্বর্ণের বারটি তাঁর কাছে দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন জাহাঙ্গীরকে এবং কিছু টাকা দিলে বারটি বিমানবন্দরের বাইরে বের করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক হওয়ায় সহজে বিশ্বাস করে ওই প্রবাসী যাত্রী মিজানকে কাস্টম পার করার জন্য দিয়ে দেন। পরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস পার করে স্বর্ণের বারের আশায় দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে বিষয়টি এভিয়েশন সিকিউরিটিকে (এভসেক) জানান তিনি।
অতঃপর সিসিটিভির ফুটেজ শনাক্ত করে র্যাবের গোয়েন্দা মিজানকে শনাক্ত করে অফিসে ডেকে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বারটি প্রবাসী যাত্রীকে ফেরত দিতে বলা হয়। পরে এভসেকের সামনে বারটি প্রবাসীকে ফেরত দিলে সেটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ডিএম করে। অপরদিকে র্যাবের ওই গোয়েন্দাকে র্যাব-১ হেফাজতে দেওয়া হয়।
এদিকে র্যাবের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, র্যাব-১ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর দেহ তল্লাশি করে পরিহিত কালো রঙের ব্লেজারের ডান পকেটে থাকা মোবাইল কাভারের ভেতর থেকে কালো রঙের স্কচ টেপে মোড়ানো অবস্থায় ৮টি এবং জামার বুকপকেট থেকে ২টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। জব্দ করা স্বর্ণের বারগুলোর প্রতিটির গায়ে ইংরেজিতে NAIF, 10 TOLAS FINE GOLD, 999.9 লেখা রয়েছে। দশটি বারের ওজন ১০০ তোলা এবং এর বাজারমূল্য ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ ছাড়া তাঁর কাছ থেকে দুটি অপো মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব স্বর্ণের বারের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি মিজান। পরে ২০ মার্চ শেষ রাতে এসব বার ও মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব। সেই সঙ্গে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানান, স্বর্ণ চোরাচালানিদের বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দেশে স্বর্ণের বার আনার কাজে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
এ ঘটনায় র্যাব গোয়েন্দা শাখার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান বাদী হয়ে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় সার্জেন্ট মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে মামলা দেন। সেই সঙ্গে মিজানুর রহমানকে উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া সেনাবাহিনীর ওই সার্জেন্ট র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার আশুরহাট গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে। তিনি যশোর সেনানিবাসের ১৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট র্যাব সদর দপ্তরের প্রেষণে কর্মরত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মুশফিকুর রহমান সোমবার (২৪ মার্চ) বলেন, ‘আমি তো সরকারি চাকরি করি। সিভিলিয়ান না। সেও (আসামি) চাকরি করে। এ জন্য এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।’
অপরদিকে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মুহাম্মদ শামীম আহমেদ একই দিন বলেন, ‘ওই সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে মামলার পর রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে আজ তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
কত দিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত এবং চক্রের কতজন রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘একটি একটি বিশাল সিন্ডিকেট। আমরা মাত্র তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছি। কিন্তু বিস্তারিত জানতে হলে আরও অনেক সময় প্রয়োজন। তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত কিছুই বলা যাবে না।’
অপরদিকে চোরাচালান ও চক্রের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বখতিয়ার হোসেন একই কথা বলেন। তিনি জানান, সার্জেন্ট মিজানকে রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া সার্জেন্টের বরাত দিয়ে থানা-পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত সার্জেন্ট মিজান। আর কয়েক বছর পর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।