আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটি দেশ কতটা উন্নত এবং শক্তিশালী তা ওই দেশের সমর শক্তি পরিমাপ করলে অনেকটাই বোঝা যায়। বিশেষ করে কোন একটি দেশের কতটা যুদ্ধ বিমান আছে? এসব বিমান কতটা বিধ্বংসী? তার ওপর নির্ভর দেশটির প্রতিরক্ষা। কেননা, একটি রাষ্ট্র যখন আকাশে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দেয়, তখন বহি:শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার ইঙ্গিতও বহন করে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। এই দেশ দুইটি বরাবরই যুদ্ধ বিমানের মহড়া দিয়ে আসছে। তাদের বহরে নিত্যনতুন যোগ হচ্ছে যুদ্ধযান। এক্ষেত্রে ভারতের রাফায়েল এবং পাকিস্তানের এফ ১৬ বিমান দুইটির তুলনা করাই যায়। জানুন এই দুইটি যুদ্ধ বিমানের মধ্যে কোনটি শক্তিশালী।
ভারতের যুদ্ধ বিমান রাফায়েল
ফ্রান্সে তৈরি যুদ্ধ বিমান রাফায়েল অত্যাধুনিক সমর সাজে সজ্জিত। এগুলো মূলত জেট বিমান।
রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্ত থেকে অপারেটর করা হচ্ছে।
Dassault Rafale বা রাফায়েলে ফরাসি বিমান। এই বিমানটিকে ফোর প্লাস প্লাস প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলা হয়। আজ সারা বিশ্বে রাফালের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে জেনে নিন কতটা বিপজ্জনক রাফাল।
এটি একটি ফরাসি টুইন-ইঞ্জিন, ক্যানার্ড ডেল্টা উইং, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট। এটি Dassault Aviation দ্বারা ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে। Dassault Rafale বিস্তৃত অস্ত্রে সজ্জিত। এটি বিমানের আধিপত্য, শত্রু বিমানকে জড়িত করা, বায়বীয় পুনরুদ্ধার, স্থল সমর্থন, শত্রু অঞ্চলের গভীরে প্রবেশ করা, জাহাজবিরোধী হামলা এবং পারমাণবিক আক্রমণের মতো মিশনগুলো সম্পাদন করতে পারে।
রাফায়েল একটি মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট, যা ৫.৬ প্রজন্মের বলে মনে করা হয়। এই প্রজন্মটি পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের তুলনায় কিছুটা কম আপগ্রেড।
রাফালের শক্তি পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের মতোই। যুদ্ধক্ষেত্রেও এই বিমান তার উপযোগিতা প্রমাণ করেছে। বড় কথা হল ফ্রান্স, যে দেশ রাফাল তৈরি করে, আমেরিকার মতো অস্ত্র কূটনীতি করে না। এটি ক্রেতাদের অনেক সুবিধা প্রদান করে।
একটি রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের ঘণ্টায় গতি ২২২৩ কিলোমিটার। এই জেট বিমানের ৩৭০০ কিলোমিটার।
এই যুদ্ধবিমান ১৫ হাজার ৮৩৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে। রাফায়েল যুদ্ধবিমান স্ক্যাল্প, হ্যামার এবং মিটিওর মিসাইল বহন করতে পারে। এছাড়াও, এটি একটি ৩০ মিমি বন্দুক দিয়ে সজ্জিত।
রাফায়েলে SPECTRA সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট সেন্সর দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে, যা দীর্ঘ পরিসর থেকে হুমকি শনাক্ত করতে এবং স্থানীয়করণ করতে সক্ষম।
রাফায়েলে একটি ফ্লাইট কম্পিউটারও রয়েছে যা পাইলটের বিভ্রান্তি রোধ করতে পারে এবং দুর্বল ফ্লাইট পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমানকে সংশোধন করতে পারে।
ভারত ছাড়াও রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ক্রেতা ক্রোয়েশিয়া, মিশর, গ্রিস ও কাতার।
পাকিস্তানের এফ ১৬ বিমান কতটা শক্তিশালী?
মূলত অর্থ সাশ্রয়ী হালকা বহুমুখী বিমান হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে এফ ১৬ বিমান। আরেক মার্কিন ব্যয়বহুল বিমান এফ ১৫কে সাহায্য করতেই এই বিমান তৈরি করা হয়েছিল। ‘এয়ার টু এয়ার’-এ এফ ১৬ অত্যধিক সফল।
এফ ১৬-এর গতি ২৪১৪ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। এফ ১৬ যুদ্ধ বিমানকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে রাখছেন, কারণ উল্লম্বভাবে আকাশ পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এফ ১৬-এর গতি অনেকটাই বেশি।
এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের সুপারসনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬-এর দু’টি কোড নাম রয়েছে। একটি হল, ‘ফাইটিং ফ্যালকন’ এবং অপরটি ‘ভাইপার’। ১৯৭৪ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করে জেনারেল ডায়নামিক্স। পরবর্তীকালে লড়াকু জেটটির উৎপাদনের দায়িত্ব পায় লকহিড মার্টিন নামের মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি এই যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে আমেরিকা।
এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন মূলত মার্কিন বিমানবাহিনীর (ইউএসএএফ) একটি একক ইঞ্জিনের বহুভূমিকাযুক্ত যুদ্ধ বিমান। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো আবহাওয়ায় এটি উড়তে ও আঘাত হানতে সক্ষম।
‘এয়ার টু এয়ার’ হামলার ক্ষেত্রে এফ ১৬ অত্যধিক সফল।
এফ ১৬ এর ‘নাইট ভিশন’ যথেষ্ট শক্তিশালী। অর্থাৎ রাতেও এটি একই শক্তিতে হামলা চালাতে পারে। কামান, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা সবরকম অস্ত্রই থাকে এতে। এফ ১৬ এর বা দিকের ডানায় থাকে একটি ২০ এমএম এম৬১ ভালকান কামান। এফ ১৬-এর কামানের গুলির হার ৬ হাজার রাউন্ড প্রতি মিনিটে।
এর ককপিট অনেক উন্নত। এতে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল ডিসপ্লে। এর ফলে সুপার ইমপোজড রাডার ডেটা দেখতে পারেন পাইলট। এফ ১৬-এর রাডার অত্যন্ত শক্তিশালী। এই বিমানে ভার্টিকল স্টেবিলাইজার আছে। ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ সম্ভব যুদ্ধের সময়ও।
মাটিতে থাকা যেকোনও চলন্ত বস্তুকেও নিশানা করতে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান। প্রতি ঘণ্টায় ওড়ে ২৪১৪ কিলোমিটার। আকাশপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এফ ১৬ কে অনেক অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের চেয়ে এগিয়ে রাখেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এফ-১৬ এর অস্ত্র রাখার ক্ষমতাও ক্ষমতাও অবিশ্বাস্য। ২১,২৮২ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এফ ১৬-এর।
১৯৭৬ সালে উৎপাদনের অনুমোদনের পর থেকে ৪,৬০০ টিরও বেশি এফ-১৬ নির্মিত হয়েছে। তবে মার্কিন বিমানবাহিনী এখন আর এটি কেনে না। বিভিন্ন দেশের কাছে এর উন্নত সংস্করণ বিক্রি করা হয়। জেনারেল ডায়নামিক্স ১৯৯৩ সালে তার বিমান উৎপাদন ব্যবসা লকহিড কর্পোরেশনের কাছে বিক্রি করে। মার্টিন মেরিয়েটার সাথে ১৯৯৯ সালেএকীভূত হওয়ার পরে লকহিড মার্টিনের অংশ হয়ে যায়।
এফ-১৬ এর আনুষ্ঠানিক নাম ‘ফাইটিং ফ্যালকন’। তবে অনুভূত সাদৃশ্যের কারণে ‘ভাইপার’ নামটি সাধারণত বিমানের চালক ও কর্মীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
মার্কিন বিমানবাহিনী, এয়ার ফোর্স রিজার্ভ কমান্ড ও এয়ার ন্যাশনাল গার্ড ইউনিটসমূহে সক্রিয় দায়িত্ব ছাড়াও, বিমানটি মার্কিন বিমানবাহিনীর থান্ডারবার্ডস বায়বীয় প্রদর্শন দল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি আগ্রাসী বিমান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অন্তত ২৫ টি দেশের বিমানবাহিনীতে এফ-১৬ রয়েছে। ২০১৫ সালের হিসাবে সামরিক সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ফিক্স-উইং বিমান এটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।