রাজধানী ঢাকায় আবারও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে ৪৪ জন সরকারি আমলার অপসারণের দাবি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। তোপখানা রোড, সচিবালয়, সেগুনবাগিচা, মেট্রোরেলের পিলারসহ বিভিন্ন এলাকায় সাঁটানো পোস্টারগুলোতে স্পষ্টতই একটি বার্তা বহন করছে—এই আমলারা গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ কায়েমে সহায়তা করছেন বলে অভিযুক্ত। ব্যানারটি এসেছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামে একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে, যাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
Table of Contents
পোস্টার আন্দোলন ও মূল বক্তব্য
‘পোস্টার’ শব্দটি এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে রাতের আঁধারে পোস্টার লাগানোর মাধ্যমে প্রতিবাদের এক নতুন ধারা গড়ে তোলা হয়েছে। ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের ব্যানারে সাঁটানো এসব পোস্টারে দাবি করা হয়েছে যে, ৪৪ জন শীর্ষ আমলা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। দাবি অনুযায়ী, এসব কর্মকর্তারা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং দমননীতির সঙ্গে জড়িত।
পোস্টারে চিহ্নিত আমলাদের মধ্যে রয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এবং আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের সচিব ও মহাপরিচালকরা।
‘জুলাই মঞ্চ’ ও এর গোপন কার্যক্রম
‘জুলাই মঞ্চ’ নামটি একেবারেই নতুন এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পোস্টার লাগানোর সময় হাতে-নাতে ধরা পড়া কায়কোবাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পল্টন এলাকার মো. আলম নামে এক ব্যক্তি তাকে পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়েছে ৫০০ পোস্টারে ১ হাজার টাকা। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, এটি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিক আন্দোলনের অংশ নয়, বরং সুপরিকল্পিত কোনো প্রচারণা।
স্থানীয়দের মতে, মেট্রোরেলের বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের আশপাশ ও এর পিলারে ব্যাপক হারে পোস্টারিং হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউই এই ‘জুলাই মঞ্চ’-এর প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেননি।
বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট
অভিযুক্ত আমলাদের মধ্যে রয়েছেন যেমন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান, তেমনি রয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, দুদকের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ দায়ের করা না হলেও, পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সরকার যতদিন দায়িত্বে রাখবে, ততদিন আমি কাজ করব।” এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
রাজধানীতে পথচারীরা পোস্টারগুলো দেখে কৌতূহলী হলেও অধিকাংশই বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু আলোচনা হলেও, এই আন্দোলন এখনো মূলধারার কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। বরং প্রশ্ন উঠেছে, এই পোস্টারিং এর উদ্দেশ্য কী? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? নাকি আদৌ কোনো জনসমর্থন আছে?
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছেন, “সরকারি সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।” একই সুরে কথা বলেছেন আরও কয়েকজন সচিব। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই পোস্টারিং নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পোস্টার আন্দোলনের সামাজিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
এই ধরনের পোস্টারিং নাগরিক সমাজে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করে অপসারণ দাবি করা হলে সেটি অবশ্যই আইনি ও নৈতিক দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ঘটনাগুলোর তদন্ত করা এবং দোষীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
External reference: Government services portal
এই পরিস্থিতিতে আরও নজরদারি এবং সচেতনতা জরুরি, যাতে কেউ রাজনৈতিক বা সামাজিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য প্রশাসনের সুনামহানি করতে না পারে।
FAQs
পোস্টারিং কারা করেছে?
‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি অজ্ঞাত সংগঠনের নামে পোস্টারিং হয়েছে, তবে সংগঠনটির পরিচয় নিশ্চিত নয়।
কতজন আমলার বিরুদ্ধে পোস্টারিং হয়েছে?
মোট ৪৪ জন শীর্ষ আমলার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো হয়েছে।
কেন এই পোস্টারিং করা হয়েছে?
এই পোস্টারিং-এর মাধ্যমে তাদের গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
কোন কোন এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে?
ঢাকার সচিবালয়, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, মেট্রোরেলের পিলারসহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করা হয়েছে।
পোস্টারে নাম থাকা কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।