জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহীতে স্ত্রী আওয়ামী লীগের কর্মী, ফেসবুকে ‘জয় বাংলা’ লেখেন। তাই তাকে তালাক দেওয়ার জন্য স্বামীকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, ওই ব্যক্তিকে মারধরও করেছেন তারা। শনিবার সন্ধ্যায় এমন ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীতে।
ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন নগরীর চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও বীনা মজুমদার। মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী বীনা গৃহিণী। বীনা নগরীর শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের কর্মী। ২০১৩ ও ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় পাড়ার মাঠে শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সদস্য মো. সনিসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী মিজানুর রহমানকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিন ছিল মিজানুর রহমানের ছেলের জন্মদিন। বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ব্যক্তিগত কাজে বাড়ির বাইরে বের হলে তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ যায় সেখানে।
ঘটনার পর মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমাকে দেখে ওরা বলছে, “স্ত্রীর কামাই খায়।” আমি এর প্রতিবাদ করে বলি, “আমি সারা দিন কাজ করি। স্ত্রীর কামাই কেন খাব?” তখন আমাকে বলে, “তুই যদি তোর বউকে না ছেড়ে দিস, এখান থেকে না পাঠাস, তাহলে খবর আছে।” কেন ছাড়ব প্রশ্ন তুললে তারা আমাকে গালি দেয় এবং মারধর শুরু করে।’ মারধরে তার হাত, মাথা, কান ও কপালে আঘাত পেয়েছেন বলে দেখান ভুক্তভোগী মিজানুর।
মিজানুরের স্ত্রী বীনা মজুমদার বলেন, ‘কিছুদিন আগে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট করি। সেখানে “জয় বাংলা” লিখি। এ জন্য সনি আমাকে ফোন করে বলে, “এসব লেখা যাবে না। লিখলে খুব খারাপ হবে।” আমি বলি, “দল যখন ক্ষমতায় ছিল, আমি তো কারও সঙ্গে খারাপ কিছু করিনি। এরপরেও যদি আমার খারাপ হয়, তাহলে হবে।” তারপর ফোন রেখে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী সেলুনে যাচ্ছিল। ওরা ধরে বলে, “তোর বউ আওয়ামী লীগ করে, তুই তোর বউয়ের কামাই খাস। তুই তোর বউকে ছেড়ে দিবি।” আমার স্বামী কোনো দল করে না। তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। চিৎকার শুনে আমি গেলাম। সনি ছেলেটা কয়দিন আগেও আমাকে আম্মা বলে ডাকত। তাকে বলি, “কী ব্যাপার সনি? এসব কী?” সে বলে, “কোনো আওয়ামী লীগের গান চলবে না।” আমি বলি, “আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব, মরে গেলেও করব। দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। এরপরই আমার স্বামীর গায়ে হাত তোলে।”’
বীনা বলেন, ‘এখনও কিন্তু বিএনপি আসেনি। সমন্বয়করা বলেছিল, সমান অধিকার বোঝেন। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে পার্থক্য কেন আসল? দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার সাথে এমন হবে কেন? আমার দোষ একটাই—আমি আওয়ামী লীগ করি। এ জন্য আমার স্বামীকে চাপ দিচ্ছে যেন আমাকে ছেড়ে দেয়। এটা কেমন কথা? দলের সঙ্গে সংসারের কী সম্পর্ক? যারা অন্যায় করেছে, তারা শাস্তি পাবে। যাদের জন্য আওয়ামী লীগের এই অধঃপতন, তাদের বিচার হোক। যারা অন্যায় করেনি, তাদের কেন হেনস্তা? এটা কেমন ন্যায়বিচার? আমরা এখন আতঙ্কিত। আমরা নিরাপত্তা চাই।’
বুয়েটকে হারিয়ে ‘মাস্টারমাইন্ড ২.০’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শাবিপ্রবি
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক যুবদল নেতা মো. সনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বীনা মজুমদার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। এ জন্য তার স্বামীকে বলছিলাম। তখনই কয়েকটা ছেলে দু-একটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে। এটা আমরা মীমাংসা করে ফেলেছি। তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনই এটা মীমাংসা করে নিয়েছেন। তাই পুলিশ ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করলে, তদন্ত করে দেখা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।