জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি মৌসুমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর আম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজশাহী বাঘার ২২০ জন আম চাষির কাছ থেকে ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হবে বিদেশে। ইতোমধ্যে আমচাষীরা বিভিন্ন দেশে আম পাঠানোর জন্য কৃষি বিভাগের মাধ্যমে চুক্তিও করেছেন।
বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি করার জন্য উপযোগী চাষযোগ্য করে গড়ে তুলছেন চাষীরা। কয়েকদিনের মধ্যে বাগান থেকে আম নামাতে শুরু করবেন চাষিরা। এবছর প্রায় তিন কোটি টাকার আম বিদেশে রপ্তানীর আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চাষীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে,দেশের পছন্দনীয় আম লক্ষণভোগ, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত এবং ল্যাংড়া বিদেশে রপ্তানীর উপযোগী করে উৎপাদন করছেন। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আম পাড়ার নির্দেশনা ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ ও হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে। ৬ জুন থেকে নামবে ল্যাংড়া।কয়েকদিন পর রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসব আম বিদেশে পাঠানো শুরু হবে। রাজশাহী থেকে এ বছর ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হলে তিন কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে আম চাষী।
আমচাষীরা জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই রপ্তানিকারকের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠাচ্ছেন চাষীরা।অন্যান্য বছরের মত এবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে রপ্তানি উপযোগী করে আমচাষ করেছেন আম চাষীরা।
চাষীরা আরও জানায়, ‘আমরা রপ্তানি উপযোগী বেশি আম উৎপাদন করতে পারি, কিন্তু রপ্তানি হয় কম। তবে এবার অন্যান্য বছরের ব্যতিরেকে এবছর আমাদের আমের চাহিদা অনেক বেশি। এতে করে মনে করছি রপ্তানি বাড়বে বহুগুণে।
এদিকে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে রপ্তানিকারকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি এমন একজন চাষি ইতোমধ্যে ৫০০ কেজি গোপালভোগ আম সুইডেনে পাঠানোর জন্য গাছ থেকে নামিয়ে রপ্তানীকারকের কাছে পাঠিয়েছেন। রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকায় আনোয়ারুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তির আমবাগান। তিনি রাজশাহী এগ্রো ফুড সোসাইটির সভাপতি।
তিনি বলেন প্রতিবছরই তার বাগানের ফ্রুট ব্যাগিং করা আম বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন। বাঘা ছাড়া অন্য কোন স্থানের চাষীদের চুক্তিবদ্ধ না করানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে আমচাষী আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন কৃষি বিভাগ শুধু মাত্র বাঘা উপজেলার চাষীদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনে। তবে আম রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবখানেই হয়।
এদিকে রাজশাহীর পবা থেকেও আম যায়। বাঘার চাষীদের পুরনো একটা তালিকা কৃষি বিভাগের কাছে আছে এবং শুধু তারাই কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসে। আমাদের যেহেতু কিছু বলা হয় না, তাই নিজেদের মত করেই বিদেশে পাঠাতে হয় আম।
আনোয়ারুল ইসলাম আরও জানান, এনজেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এন হোসেন সজলের মাধ্যমে তিনি সুইডেনে আম পাঠাচ্ছেন। শুক্রবার আম নামানোর পরই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান এনজেল গ্রুপ উড়োজাহাজে করে আম নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাগিং করা আম খুবই ফ্রেশ। আমের কাছে কীটনাশক তো দূরের কথা; একটা পিঁপড়াও যেতে পারে না। তাই হট কেকের মত আমার আম তাদের কাছে অতি পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে।
আনোয়ারুল ইসলাম গত শুক্রবার থেকেই রপ্তানির উদ্দেশ্যে আম পেড়ে ঢাকায় পাঠানো শুরু করলেও এমন খবর নেই কৃষি বিভাগের কাছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাঘা উপজেলার প্রায় ২২০ জন চাষি ৩০০ মেট্রিক টন আম দেবেন বলে হটেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রপ্তানীকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করছেন। এদের হিসাবটাই শুধু আছে। তবে চাষী ও রপ্তানীকারকদের উদ্যোগেই উড়োজাহাজে আম পাঠানো হয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা নেই বলে তারা মনে করেন।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘চুক্তিবদ্ধ চাষীদের আমরা প্রশিক্ষণ দেই।এবং তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কাজটি শুধু বাঘা উপজেলায় হয়।’
রপ্তানী করতে হলে রপ্তানীকারকদের আম ঢাকায় সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউজে নিতে হয়। সেখানে আমের মান যাচাই করে গুণগত প্যাকেটিং হয়,যাতে আম বেশি সময় ভাল থাকে। তারপরে আম রপ্তানীর জন্য ছাড়পত্র পায়।
রাজশাহীতে এ বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এসব বাগানে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। আর এই আম নিয়ে রাজশাহীর অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে ৯০০ কোটি টাকা।
এদিকে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন, ‘গতবছর চাষীরা রপ্তানী করা আমে কেজিপ্রতি দাম পেয়েছিলেন ৯০ টাকা। এবছর আমের ফলন কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। এখনই বাজারে ভাল আম কেজি প্রতি ৬০ টাকা বা তারও বেশি।
তবে কৃষি বিভাগ মনে করছে সব চাষীর আম যদি রপ্তানি না-ও হয়, সেক্ষেত্রে তারাও ভাল দাম পাবেন। কারণ, ব্যাগিং করা ফ্রেশ আমের দাম বাজারে দাম অনেকাংশই বেশি হয়। তবে এবার কোভিডের সংক্রমণ না থাকায় বেশি পরিমাণে আম রপ্তানী করা যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।