জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে জর্জরিত বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য রেলের আয় বাড়াতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ বা লাগেজ ভ্যান থাকবে পণ্য পরিবহনের জন্য। প্রাথমিকভাবে মোট ১২৫টি লাগেজ ভ্যান যুক্ত করা হচ্ছে। চলতি মাসের ২৪ সেপ্টেম্বর এই লাগেজ ভ্যানের উদ্বোধন করা হবে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর তিনিই এই লাগেজ ভ্যান উদ্বোধন করবেন। মালামাল পরিবহনের জন্য প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে এটা যুক্ত করা হবে। কৃষক তাদের পণ্য সরবরাহ করবে। একইসঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাগেজও যুক্ত হবে।
মন্ত্রী বলেন, ১২৫টি লাগেজ ভ্যান আসছে। এর মধ্যে ৭৫টি মিটার গেজ লাইনের ট্রেনে ও ৫০টা ব্রড গেজ লাইনের ট্রেনের জন্য। ব্রডগেজে ১০টা রেফ্রিজারেটর আর মিটারগেজে ১৬টা রেফ্রিজারেটর থাকবে। তখন খুলনা বা কক্সবাজার থেকে মাছ ও অন্যান্য পণ্য আনা যাবে।
রেল সূত্রে জানা গেছে, রেলের আয়ের অন্যতম খাত পণ্য পরিবহণ। আর এটি করা হয় লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে। বর্তমানে রেলে ৪১টি মিটারগেজ ও ১০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান আছে। যার বেশির ভাগের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। ফলে রেলের আয়ের এই প্রধান খাত থেকে যথেষ্ট আয় আসছে না।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান লাগেজ ভ্যানগুলোর বেশির ভাগেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নেই। এগুলো আর কাজ করছে না। তাই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেলে রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে অত্যাধুনিক ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ জুন পণ্য পরিবহণ ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে আধুনিক, নিরাপদ এবং গুণগত মানসম্মত রোলিং বহরে স্টক যুক্ত করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্পের (রোলিং স্টক সংগ্রহ) অনুমোদন দেয় সরকার।
সে সময় বলা হয়েছিল, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নতুন যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের জন্য ট্রেন পরিচালনা সহজ করতে রোলিং স্টক সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পুরোনো ও জরাজীর্ণ রোলিং স্টক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোলিং স্টকের স্বল্পতা পূরণ করা হবে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৭ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করবে ৭৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণ দেবে। প্রকল্পের মেয়াদকালে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত হলেও পরে তা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চীনের মধ্যে ওই লাগেজ ভ্যান সংগ্রহের দুইটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যদিও ২০২২ সালের জুলাই থেকে এসব লাগেজ ভ্যান বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত সব লাগেজ দেশে আসেনি। শুরুতে এটি চালু হলেও তা শুধু পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এই উদ্বোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তাই এখনও ঠিকভাবে সব গোছানো হয়নি। আবার অনেক লাগেজ ভ্যান এখনও দেশে আসেনি। এই প্রকল্পের যিনি পরিচালক তিনি অবসরে গেছেন। তাই বিস্তারিত জানাতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জেনারেল লাগেজ ভ্যানের মধ্যে মিটারগেজের ৩০টি ও ব্রডগেজের ৩০টি সবুজ শাক, সবজিসহ মৌসুমি ফল ও ফুল পরিবহণে ব্যবহার হবে। এছাড়া ১৬টি মিটারগেজ ও ১০টি ব্রডগেজ রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যান পচনশীল দ্রব্য (মাছ, মাংস, দুধ) পরিবহণে ব্যবহার হবে। লাগেজ ভ্যানগুলো উন্নতমানের বগি সংবলিত হওয়ার কারণে মিটারগেজ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ও ব্রডগেজ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ট্রেন চালানো হবে। আবার অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম আন্তঃনগর সব ট্রেনে সংযোজন করে অতি দ্রুত এবং নিরাপদ ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
এর আগে ২০২১ সালে রেলওয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে সবজি, ফলমূল, ফুল ও চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস ট্রেনে করে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করার কথাও তখন বলা হয়।
সে সময় বলা হয়েছিল, সেসব ট্রেন বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করবে। কিন্তু সেতুর শিডিউল জটিলতায় সে উদ্যোগ থমকে যায়। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষিপণ্য নিয়ে বিশেষ ট্রেনটি এই রুটে চলবে।
তবে এখনও এটা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, এটা আমাদের পরিকল্পনাতে আছে। খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।