জুমবাংলা ডেস্ক : হজে খরচ অনেক বেশি। এক কথায় মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে হজ। তাই নিয়ত করেছি চলতি রজমানে স্ত্রীকে নিয়ে ওমরাহ করতে যাবো। এখন দেখি ঢাকা থেকে সৌদি আরবের সব গন্তব্যে উড়োজাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এতে আমাদের ওমরাহ খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এমন চলতে থাকলে ওমরাহও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
রবিবার (১১ মার্চ) ফকিরাপুলের একটি ট্রাভেল এজেন্ট অফিসে বসে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার দোহারের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, আগে হজের প্যাকেজ খরচ নাগালে ছিল। যাদের আর্থিক সচ্ছলতা ছিল, তারা হজে যেতে পারতেন। এক বছর আগে হঠাৎ হজের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই আমরা ওমরাহ করার নিয়ত করেছি। কিন্তু এখন দেখি উড়োজাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, ওমরাহ বা রজমান উপলক্ষে উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ানো হয়নি। টিকিটের চাহিদা বাড়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাড়া বেড়েছে। অর্থাৎ যাত্রী চাহিদা বাড়লে এমনিতেই উড়োজাহাজে ভাড়া বেড়ে যায়।
এদিকে রমজানে ওমরাহ যাত্রীদের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের মতো রাখতে ঢাকায় দেশ-বিদেশের এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা।
তারা বলেন, হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অনেক মানুষ কম খরচে ওমরাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। উপযুক্ত সময় হিসেবে রমজানকে বেছে নেন। এ সুযোগে দেশ থেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট না বাড়িয়ে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এয়ারলাইন্সগুলো। এ প্রক্রিয়াটি তারা খুবই ডায়নামিকভাবে করে। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা ও মদিনায় সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সাউদিয়া। এ রুটে স্বাভাবিক সময়ে বিমানের রিটার্ন (যাওয়া-আসা) টিকিটের মূল্য ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। এর কাছাকাছি ভাড়া থাকে সাউদিয়ারও। তবে এখন রমজানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেদ্দা রুটের ভাড়া এক লাখ ১০ হাজার টাকার বেশিতে ওঠানামা করছে। আর সাউদিয়ার ভাড়া এক লাখ ২০ হাজার টাকার ওপরে ওঠানামা করছে। অর্থাৎ বিমান ও সাউদিয়ার টিকিটে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেশি ভাড়া বেড়েছে।
এছাড়া এয়ার অ্যারাবিয়া, এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিসতারা এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ার এবং সালাম এয়ার নিজ দেশে ট্রানজিট দিয়ে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে যাত্রী পৌঁছে দেয়। ট্রানজিট ও যাত্রার লম্বা সময়ের কারণে এসব ফ্লাইটে আগে ভাড়া তুলনামূলক কম ছিল। তবে রমজান মাস কেন্দ্র করে তারাও ভাড়া বাড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রী পরিবহন বন্ধ ছিল। একইভাবে ওমরাহ যাত্রীরাও সৌদিতে যেতে পারেননি। পরের বছর সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব গেছেন। পরে ২০২২ সালে হজ এবং ওমরাহ করার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে মূল হজের প্যাকেজ খরচ বেড়ে যায়। তখন থেকে অনেকে হজ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে কম খরচে ওমরাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় তারা রমজান মাস বেছে নেন। এ কারণে এ মাসে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি।
কুয়েত এয়ারওয়েজ স্বাভাবিক সময়ে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় যাত্রী বহন করত। বুধবার (১৩ মার্চ) তাদের ওয়েবসাইটে কুয়েতে ট্রানজিট দিয়ে ঢাকা-জেদ্দা টিকিট ৯৫ হাজার টাকা করে দেখাচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া ভারতে ট্রানজিট দিয়ে ভাড়া দেখাচ্ছে ৯০ হাজার টাকা, ওমান এয়ার ৯৭ হাজার টাকা। একইভাবে অন্য এয়ারলাইন্সে ট্রানজিট দিয়ে ভাড়া গড়ে ৩০ হাজার টাকা বেশি দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে একাধিক এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিসের টেলিফোন নম্বরে কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, উড়োজাহাজে যাত্রীদের মাঝে টিকিট চাহিদা বাড়লে ভাড়া বাড়ে; এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি বছরই রমজানে এমনটি হয়। বিমানের সর্বনিম্ন ভাড়া আগেরটাই আছে। রমজানে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা কেন বাড়ানো হয় না, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, রমজানে সারাবিশ্ব থেকেই মুসলমানরা সৌদ আরবে ওমরাহ করতে যান। এ সময় ভাড়া অনেকটা বেড়ে যায়। তবে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হলে ভাড়া অনেকটাই কমে যাবে। তাই বিমানকে ফ্লাইট বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় অনুরোধ জানিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।