ধর্ম ডেস্ক : রমজান মাস আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ ফজিলতের মাস। এই মাস সাওয়াব অর্জনের মাস এবং এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে: রহমত, বরকত ও নাজাত।
এ মাসে প্রতিটি আমলে আল্লাহ ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব দান করেন। এজন্য বিশেষ এই মাসে বেশি বেশি আমল করা উচিত। নিচে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি আমল দেওয়া হলো:
১. সিয়াম পালন করা
রমজানে সিয়াম পালন ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।” [সুরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]
২. সময়মতো নামাজ আদায় করা
রমজানে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে এবং নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. সহিহভাবে কোরআন শেখা
যারা কোরআন শিখতে পারেননি, তারা এ মাসে কোরআন শেখার চেষ্টা করুন। “পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” [সুরা আলাক : ১]
৪. অপরকে কোরআন তিলাওয়াত শেখানো
রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনিই, যিনি নিজে কোরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন।” [সহিহ আল-বুখারী : ৫০২৭]
৫. সেহরি খাওয়া
সেহরিতে বরকত রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।” [সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০]
৬. তারাবিহ নামাজ আদায় করা
রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে তারাবিহ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।” [সহিহ আল-বুখারী : ২০০৯]
৭. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা
রমজান কোরআন নাজিলের মাস। হাদিসে এসেছে, “রোজা আমারই জন্য, এর পুরস্কার আমি নিজেই দেব।” (বুখারী : ১৭৭৩)
৮. শুকরিয়া আদায় করা
আল্লাহর দানকৃত নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
৯. কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণ করা
রমজানের প্রতিটি রাতেই আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪)
১০. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা
রাসুল (সা.) বলেন, “ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত।” [সহিহ মুসলিম : ২৮১২]
১১. দান-সদকা করা
রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল, বিশেষ করে রমজানে। [সহিহ আল-বুখারী : ১৯০২]
১২. উত্তম চরিত্র গঠন
রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি রোজা রাখে, তবে সে যেন অশ্লীলতা ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে।” [সহিহ মুসলিম : ১১৫১]
১৩. ইতিকাফ
রাসুল (সা.) জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। [সহিহ আল-বুখারী : ২০৪৪]
১৪. দাওয়াতে দ্বীনের কাজে অংশগ্রহণ করা
আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে ডাকে, তার চেয়ে উত্তম আর কেউ হতে পারে না।” [সুরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
১৫. ওমরাহ পালন করা
রাসুল (সা.) বলেন, “রমজানে ওমরাহ করা আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য।” [সহিহ আল-বুখারী : ১৮৬৩]
১৬. লাইলাতুল কদর তালাশ করা
“কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” [সুরা কদর : ৪]
১৭. বেশি বেশি দুআ করা
“ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
১৮. ইফতার করা
রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি খেজুর দিয়ে ইফতার করবে, সে বেশি বরকত লাভ করবে।” [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭]
১৯. রোজাদারকে ইফতার করানো
“যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে।” [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬]
২০. তওবা ও ইস্তেগফার করা
“তওবাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।” [সুরা তাহরিম : ৮]
২১. মিথ্যা ও গীবত পরিহার করা
“যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়তে পারল না, তার রোজা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন।” [সহিহ বুখারি : ১৯০৩]
২২. সবর ও সংযম পালন করা
রমজান ধৈর্যধারণের মাস। রাসুল (সা.) বলেছেন, “রোজা অর্ধেক ধৈর্য।” [ইবনে মাজাহ : ১৭৪৬]
২৩. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
রমজানে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করা দরকার।
২৪. অন্যকে ক্ষমা করা
“ক্ষমা করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়।” [সুরা আশ-শুরা : ৪০]
২৫. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা
“আমি দিনে ৭০ বার ইস্তেগফার করি।” [সহিহ মুসলিম]
২৬. মানুষের উপকার করা
“মানুষের মধ্যে উত্তম হলো, যে অন্যের উপকার করে।” [তিরমিজি : ১৯৮৭]
২৭. গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো
“গরিবকে সাহায্য করলে আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন।” [তিরমিজি : ২৩৪৬]
২৮. বিনয়ী হওয়া
“যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।” [তিরমিজি : ২০২৯]
২৯. মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য জীবন কাটায়, সে সফল।” [সুরা ফজর : ২৭-৩০]
৩০. আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভর করা
“আল্লাহ যথেষ্ট, তিনিই উত্তম সাহায্যকারী।” [সুরা আলে ইমরান : ১৭৩]
রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস, তাই আমরা যেন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত সঠিকভাবে কাজে লাগাই এবং আল্লাহর রহমত অর্জন করতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।