জুমবাংলা ডেস্ক : লালমনিরহাটে রেলওয়ে ডিভিশনে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এই ডিভিশনে থাকা লেভেল ক্রসিংগুলোর ৭৯ শতাংশ অরক্ষিত থাকায় গত তিন বছরে সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ২৫১ জন। সংকট নিরসনে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেট তৈরিসহ গেটম্যান নিয়োগে উদ্যোগের কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রংপুর রেলওয়ে ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের আওতায় রেলপথ রয়েছে ৫৪০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ রেলপথে ক্রসিং রয়েছে ১ হাজার ৯৩৯টি। এর মধ্যে গেট ও গেটম্যান রয়েছে মাত্র ৪১৩টিতে। গেট রয়েছে কিন্তু গেটম্যান নেই এমন রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ১৬৬টি। গেট ও গেটম্যান উভয়ই নেই এমন রেলক্রসিং রয়েছে ৩৬০টি।
লেভেল ক্রসিংয়ের বেশিরভাগ অরক্ষিত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানি, পঙ্গুত্ববরণ, গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছে অনেকে। বিশেষ করে, শীত মৌসুমে ও রাতের বেলায় ক্রসিংগুলোতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে রেলের গতি অনুমান করতে না পেরে অনেকে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলার আওতায় উত্তরের ৫ জেলায় গত ২০২২ সালে ৯২ জন, ২০২৩ সালে ১০১ জন ও ২০২৪ সালে ৫৮ জন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাউনিয়া জংশনের আওতায় সড়কগুলোর ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ের বেশিরভাগেই নেই গেট। কয়েকটিতে চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কাউনিয়ার তকিপল বাজার, সাব্দী মৌলটারী, গের্দ্দো বালাপাড়া, শহীদবাগ বাজার, বল্লভবিষু, সাধু রেলগেট, মীরবাজ বিজলির ঘুন্টি, রেল কলোনি, কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থানা রোড, গোপাতী মজির গেট, কুটিরপাড় ক্রসিং, পাঞ্জরভাঙ্গা বাঁধের রাস্তায় লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে মালামাল ও মানুষকে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। প্রতিদিন কাউনিয়া জংশন থেকে প্রায় ১০টি আন্তঃনগরসহ ২৮টি ট্রেন চলাচল করে। রংপুর থেকে কাউনিয়া পথেই সড়কে অন্তত ১২টি ক্রসিং এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে গেটম্যান নেই এমন সাইনবোর্ড স্থাপন করে দায় সেরেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কাউনিয়ার বল্লভবিষু এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বলেন, কাউনিয়ায় প্রায় রেলক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান না থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর আগে রাতে গরুর ট্রাক রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে গরু ও কয়েকজন বেপারি মারা যায়।
বিজলের ঘুন্টি এলাকার আনছারী ও মিন্টু মিয়া বলেন, শীতকালে ঘনকুয়াশার কারণে ট্রেন দেখা না যাওয়ায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া রাতের বেলা ট্রেনের গতি অনুমান করতে না পেরে রাস্তা পার হতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
কুটিরপাড় এলাকার অটোরিকশা চালক খায়রুল ইসলাম বলেন, গাছপালার কারণে অনেক সময় ট্রেন দেখা যায় না। এছাড়া সিগন্যালও নেই যে ট্রেন আসছে তা বোঝা যাবে। এ জন্য আমরা খুব ভয়ে রেলক্রসিং পার হই। ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান খুবই প্রয়োজন।
রেল-নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, রেল খাতে উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। অথচ মানুষের জীবন বাঁচাতে গেট ও গেটম্যান নিয়োগের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ খরচ করছে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে রেলওয়ে খাতে এমন অনিয়ম দূর হবে।
https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%b8-%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%97%e0%a7%87/
এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঊধ্বর্তন কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রংপুর রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, রেলের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংকে সুরক্ষিত করতে গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। আশা করছি, রংপুরে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।