ধর্ম ডেস্ক : রাতের ঘুম যখন জীবনের এক শান্তির সময়, তখন মনেও চলে আসে একাধিক চিন্তা। আমাদের চিন্তাগুলো অনেক সময় এতটাই জটিল হয়ে যায় যে ঘুম আসতে চায় না। কিন্তু ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তির পথ দেখানো হয়েছে। রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়লে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায়—এ প্রশ্নে রয়েছে নবিজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এই লেখা সেই পবিত্র দিকনির্দেশনাকে তুলে ধরছে।
রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয়: নিরাপত্তা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য কোরআনের নির্দেশনা
রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয়—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সর্বপ্রথম যেটি উঠে আসে, তা হলো সূরা আল-মুলক। এটি কোরআনের ৬৭ নম্বর সূরা এবং এটি ৩০ আয়াতবিশিষ্ট। নবিজি (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সূরা আল-মুলক পড়ে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।” (তিরমিজি)।
সূরা আল-মুলক কেবলমাত্র কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে না, বরং এটি মানুষের মনে এক ধরণের মানসিক শান্তি এনে দেয়। বিশেষ করে ঘুমের আগে এই সূরাটি পাঠ করলে একধরনের আত্মতৃপ্তি এবং নিরাপত্তার অনুভব হয়।
এছাড়াও রাতের ঘুমের আগে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ার উপদেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। এই তিনটি সূরাকে একত্রে ‘মুআওয়িযাতাইন’ বলা হয় এবং নবিজি নিজে ঘুমের আগে এই সূরাগুলি পড়তেন এবং নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে, ঘুমের আগে নির্দিষ্ট আচার-আচরণ মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। সুতরাং ইসলামিক অনুশীলনের এই রূপগুলো আজকের দিনে আধুনিক থেরাপি হিসেবেও কাজ করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী রাতের আমল
নবিজির (সা.) জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি, তিনি ঘুমানোর আগে প্রথমে অজু করতেন। এরপর তিনি বিছানায় শোয়ার পূর্বে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন এবং তাঁর হাতের উপর ফুঁ দিয়ে তাঁর সমস্ত শরীর মুছতেন। এই আমলকে আমরা ‘রাতের রুকইয়া’ বলতে পারি।
তিনি আরও বলতেন, “ঘুমানোর সময় সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (আমানার রসূলু… থেকে শেষ পর্যন্ত) পড়লে তা রাত্রি জুড়ে সুরক্ষা প্রদান করে।” (বুখারী, মুসলিম)। এটি ছিল এক ধরণের রক্ষাকবচ যা অদৃশ্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
অধিকাংশ ইসলামি স্কলাররা বলেন, এইসব সূরা পড়া শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয় বরং এটি একটি মানসিক প্রশান্তির পথ। কোরআনের আয়াত শুধু ধর্মীয় কথা নয়, এটি একটি জীবন্ত গাইডলাইন যা মানসিক ও আত্মিক সুস্থতায় সহায়ক।
ঘুমানোর আগে সূরা পাঠের উপকারিতা: আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাসে সহায়তা করে
ঘুমানোর আগে কোরআনের সূরা পাঠ করলে তা ব্রেইনের তরঙ্গকে শান্ত করে তোলে। এটা প্রমাণিত যে নিরবচনীয় ধ্বনি ও অর্থবহ শব্দ মস্তিষ্কে এক ধরণের পজিটিভ সিগন্যাল প্রেরণ করে, যা ঘুমকে সহজ করে।
২. নিরাপত্তা ও আত্মিক প্রশান্তি প্রদান করে
সূরা পাঠ আত্মার ভিতর একধরনের সংযোগ তৈরি করে স্রষ্টার সাথে, যা মানুষকে সবধরনের অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি দেয়। এই সংযোগ একটি আত্মবিশ্বাসও জোগায় যা দৈনন্দিন জীবনের চাপ মোকাবেলায় সাহায্য করে।
৩. স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
ঘুম ভালো হলে শরীর ভালো থাকে, এই সত্য সকলেই জানি। সূরা পাঠ মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি ঘুমকে গভীর করে তোলে, ফলে শরীরও থাকে চাঙা।
আপনি এই রাতের রুটিনে সূরা পাঠকে অন্তর্ভুক্ত করবেন কেন?
সাধারণত আমাদের রাতের রুটিনে থাকে মোবাইল দেখা, ফেসবুকে স্ক্রল করা কিংবা মুভি দেখা। কিন্তু এই অভ্যাসগুলোর কোনটিই মানসিক শান্তি দেয় না। বরং মানসিক চাপ বাড়ায়। পরিবর্তে যদি প্রতিরাতে মাত্র ১০ মিনিট কোরআনের নির্দিষ্ট সূরা পড়ার অভ্যাস করি, তবে তা আমাদের পুরো রাতকেই শান্তিতে পরিণত করতে পারে।
রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয়—এ প্রশ্নের উত্তরে যখন আমরা কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাই, তখন আমাদের উচিত সেই নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা ও বাস্তব জীবনে তা অনুসরণ করা।
আসুন, আজ রাত থেকেই আমরা এই সূরাগুলোর পাঠ শুরু করি এবং আমাদের জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে তুলি।
জেনে রাখুন-
রাতে ঘুমানোর আগে সূরা আল-মুলক পড়ার উপকারিতা কী?
সূরা আল-মুলক কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। প্রতিরাতে পড়া ইসলামী সুন্নাহ অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ আমল।
সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ার উপকারিতা কী?
এই তিনটি সূরা শরীর ও আত্মার সুরক্ষা দেয়। রাসূল (সা.) নিজেও এই সূরা পড়ে ঘুমাতেন এবং নিজ শরীরে ফুঁ দিতেন।
ঘুমানোর আগে সূরা পাঠ কি ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে?
হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের আগে কোরআনের সূরা পাঠ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় যা ঘুমকে গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন করে তোলে।
রাতে সূরা পাঠের সঙ্গে অজু করা কি জরুরি?
অজু সহকারে সূরা পাঠ করা সুন্নাহ। এটি পবিত্রতার এক চর্চা যা আমলকে আরও বরকতময় করে তোলে।
কীভাবে সূরা আল-মুলক মুখস্থ করব?
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে একটি বা দুটি আয়াত মুখস্থ করতে পারলে এক মাসের মধ্যেই সূরাটি মুখস্থ করা সম্ভব। এছাড়া মোবাইল অ্যাপ এবং ইউটিউবের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
এই আমল বাচ্চাদের জন্যও উপযোগী?
অবশ্যই। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের এই অভ্যাসে অভ্যস্ত করা হলে তারা মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।