বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড দাবি করলেও, চরম প্রতারণায় ফেঁসে যাচ্ছে চীনা প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা রিয়েলমি। নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Realme C75 কে ঘিরে সাম্প্রতিক এক ঘটনার ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে — যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনটি ক্যামেরার দাপুটে বিজ্ঞাপন আসলে নিছক ভেলকি!
তিন ক্যামেরার ভেলকি – বাস্তবে একটিই!
চটকদার ডিজাইনের মাধ্যমে তিন ক্যামেরার ইঙ্গিত দিলেও, ফোন খুললেই স্পষ্ট হয় একমাত্র আসল ক্যামেরার অস্তিত্ব। বাকিগুলো নিছক “ডামি”! এই প্রতারণা এতটাই নিদারুণ যে, অনেকে এটিকে প্রযুক্তির নামে ঠকানোর চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত বলছেন।
Table of Contents
একজন ক্রেতা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ফোন খুলে দেখেন এর আসল রূপ, এবং ভিডিওতে তা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ভিডিওতে বর্ণনাকারী বলেন, “ফোনের ভেতরে গেলে দেখা যায়, শুধু একটি ক্যামেরাই আছে। অথচ বাইরের ডিজাইনে মনে হচ্ছে তিনটি ক্যামেরা আছে। গ্রাহক আসলে প্রতারিত হচ্ছে রিয়েলমির হাত ধরে।”
২০ হাজার টাকার প্রতারণা!
মাত্র ১৯,৯৯৯ টাকায় বাজারে ছাড়া হয়েছে Realme C75। ব্র্যান্ডটি দাবি করছে এটি ওয়াটার-প্রুফ, রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেল সুপার ক্লিয়ার ক্যামেরা। তবে অন্য ক্যামেরাগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই ওয়েবসাইটে! প্রতারণার আর কী প্রমাণ দরকার?
“Waterproof” লেবেলের আড়ালে ঠকানো ফিচার!
Realme তার ওয়েবসাইটে ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বলছে, ফোনটি ওয়াটার-প্রুফ। অথচ খোলার পর দেখা যাচ্ছে, সঠিক প্রটেকশন ছাড়াই ভেতরে রয়েছে সংবেদনশীল সার্কিট। এমনকি নির্ভরযোগ্য মোবাইল রিভিউ সাইটগুলো ফোনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যামেরাকে “Secondary Unspecified Camera” হিসেবে চিহ্নিত করেছে — যেটি আদতে কেবল ডিজাইনের অংশ!
এখন পর্যন্ত Realme-এর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। গ্রাহকদের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। একজন মন্তব্য করেছেন, “প্রযুক্তির নামে এমন প্রতারণা চলতে পারে না। আইনগত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।”
এই ধরনের ঘটনা স্মার্টফোন বাজারে গ্রাহক আস্থায় বড় ধাক্কা দিচ্ছে। যারা ইতিমধ্যে ফোনটি কিনেছেন, তারা বিভ্রান্ত ও হতাশ।
সি৭৫ ক্যামেরা সংক্রান্ত ইস্যুতে রিয়েলমির বক্তব্য
রিয়েলমি অফিসিয়ালি বা আনঅফিসিয়ালি কখনোই কোথাও উল্লেখ করেনি যে সি৭৫ স্মার্টফোনে তিনটি রিয়ার ক্যামেরা আছে। বরং, রিয়েলমি প্রেস রিলিজ, ভিডিও কনটেন্ট, প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য মাধ্যমে বারবার উল্লেখ করেছে যে ফোনটিতে একটি ৫০ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা রয়েছে ও একটি ফ্লিকার লেন্স রয়েছে। ফোনটির ব্যাক প্যানেলে দৃশ্যমান তিনটি ক্যামেরা বাম্পের মধ্যে একটি মূল ক্যামেরা লেন্সের জন্য, একটি ফ্লিকার লেন্সের জন্য এবং একটি শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ক্যামেরা সংক্রান্ত এসব তথ্য রিয়েলমির সেলস পয়েন্ট থেকেও গ্রাহকদের স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে/ হচ্ছে। ফ্লিকার লেন্স আশেপাশের আলোতে ফ্লিকারের ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত করে এবং ছবি তোলার সময় ফ্লিকার কমাতে সহায়তা করে। এটি মূল ক্যামেরা লেন্সকে এলইডি লাইটবক্স বা ডিসপ্লের মতো আলোর উৎস নিয়ন্ত্রণ করে ভালো মানের ছবি তুলতে সাহায্য করে। বিউটিফিকেশন বাম্পটি মূলত ডাবল টাচ-এ কিউআর কোড স্ক্যান করতে ব্যবহার করা হয়।
রিয়েলমির ব্যাখ্যা বনাম বাস্তবতা: সি৭৫ ক্যামেরা বিভ্রান্তির আসল চিত্র
রিয়েলমি সম্প্রতি তাদের জনপ্রিয় স্মার্টফোন সি৭৫-এর ক্যামেরা নিয়ে চলমান বিতর্কে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, ফোনটিতে মূলত একটি ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে, একটি ফ্লিকার লেন্স এবং একটি “বিউটিফিকেশন বাম্প” ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। তবে এই বক্তব্যের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে যা গ্রাহকদের ভুল ধারণায় ফেলেছে। নিচে আমরা রিয়েলমির ব্যাখ্যার বিপরীতে বাস্তবতা তুলে ধরছি।
ক্যামেরা নাকি কেসিংয়ের বিভ্রান্তি?
রিয়েলমির দাবিতে বলা হয়েছে, তারা কখনো তিনটি রিয়ার ক্যামেরা দাবি করেনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে — তাহলে কেন তিনটি লেন্সের মতো ক্যামেরা বাম্প ডিজাইন রাখা হয়েছে? অধিকাংশ গ্রাহক এই ডিজাইন দেখে স্বাভাবিকভাবেই মনে করেন ফোনটিতে তিনটি কার্যকর ক্যামেরা আছে। বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনে সরাসরি না বললেও, এই ধরনের ডিজাইন ও ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনই মিসলিডিং হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফ্লিকার লেন্স: সত্যিকারের ক্যামেরা নয়
রিয়েলমি ব্যাখ্যা করেছে যে ফ্লিকার লেন্স আশেপাশের আলো বিশ্লেষণ করে ছবি তোলার সময় সহায়তা করে। কিন্তু এটি কোনভাবেই পূর্ণাঙ্গ ক্যামেরা নয় — এটি একটি সেন্সর মাত্র। ক্যামেরা দাবি করে থাকলে, সেটি অবশ্যই আলাদা ছবি তোলার সক্ষমতা থাকা উচিত, যা এই ফ্লিকার লেন্সে নেই।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির বাম্প — কার্যকারিতা নাকি বিভ্রান্তি?
রিয়েলমির মতে, তৃতীয় বাম্পটি শুধুই “বিউটিফিকেশন” বা QR স্ক্যানার হিসেবে কাজ করে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় — এই অংশটিকে কেন ক্যামেরার মতো দেখানো হয়েছে? এর জন্য আলাদা বাম্পের দরকার ছিল না যদি না তারা ক্যামেরার ছদ্মাবরণে ডিজাইন করতে চাইত।
রিভিউ ও ভিডিও প্রমাণ: ব্যবহারকারীরা কী বলছেন?
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও টিয়ারডাউনগুলোতে স্পষ্ট দেখা গেছে, ফোন খোলার পর শুধুমাত্র একটি ক্যামেরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশ্বস্ত মোবাইল রিভিউ সাইটগুলোও বাকি দু’টি লেন্সকে “Unspecified” বা কার্যকর নয় বলে চিহ্নিত করেছে।
অর্ধসত্য তথ্য বিপজ্জনক
রিয়েলমির বক্তব্যে যে সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে আংশিক সত্য হলেও, সাধারণ গ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে তা বিভ্রান্তিকর। ডিজাইন ও উপস্থাপনার মাধ্যমে গ্রাহকদের মিথ্যা ধারণা দেওয়া হয়েছে — যা সরাসরি গ্রাহক অধিকার ও ভোক্তা সুরক্ষার পরিপন্থী।
সতর্ক থাকুন, ঠকবেন না!
বাজারে ফিচার গর্জে উঠলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে — এই ঘটনা তার প্রমাণ। যারা স্মার্টফোন কিনছেন, তারা অবশ্যই রিভিউ, আনবক্সিং ভিডিও ও অভ্যন্তরীণ ফিচার যাচাই করে কিনুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।