লাইফস্টাইল ডেস্ক: ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেও যদি পেটের মেদ না কমে তবে নজর দিতে হবে জীবনযাপনের পদ্ধতির দিকে।
দেহের মধ্যভাগের চর্বি গলানো সহজ বিষয় নয়। আর মেদ ঝরানোর যাত্রার শেষের দিকে পেটের চর্বি গলা শুরু হয়।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ড. লিসা ইয়ং এবং ব্যায়াম প্রশিক্ষক ভিক্টোরিয়া ব্র্যাডি ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যৌথভাবে জানান, পেটের চর্বি কমাতে যেমন প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হয় তেমনি খেতে হয় অপ্রক্রিয়াজাত খাবার, চর্বিহীন প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। আর ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ‘কার্ডিও’ এবং ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’।
তবে সাধারণ চেষ্টা পেটের চর্বি একেবারেই না কমলে আরও কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল করার পরামর্শ দেন এই দুই বিশেষজ্ঞ।
সবসময় চাপ অনুভূব করা
যে কোনো পরিস্থিতিতে যদি অল্পতেই চাপ অনুভূত হয় তবে ফলাফল হিসেবে জমতে পারে পেটে চর্বি।
ব্র্যাডি বলেন, “মানসিক চাপ থেকে চোখের খিদা যেমন বেশি লাগে তেমনি বাজে খাবারের প্রতিও ঝোঁক বাড়ায়। ফলে ওজন কমানোর লক্ষ্য বিফলে যায়।”
তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য ধ্যান, ইয়োগা, হাঁটা বা মানসিকভাবে শান্ত রাখে এরকম শখ রপ্ত করা উপকারী; সেটা হতে পারে হাইকিং, চাইকেল চালানো ইত্যাদি।
পর্যাপ্ত মান সম্মত ঘুম না হওয়া
বাজে ঘুমের কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর ফলে পেটে চর্বি জমে- জানান লিসা ইয়ং।
আর ব্র্যাডি বলেন, “এছাড়া বিপাক প্রক্রিয়া ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বাজে প্রভাব পড়ে। ভালো মতো ঘুম না হলে মিষ্টি ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া তাড়না তৈরি হয়।”
তাই মেদ কমানোর যাত্রায় মানসম্মত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। আর ভালো ঘুমের জন্য বিছানায় যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে বৈদ্যুতিক পর্দা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার পরামর্শ দেন, ব্র্যাডি।
অলস জীবনযাপন
ব্যায়াম করার সময়টা বাদে, বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে কাটালে পেটের চর্বি কমবে না। অলস জীবন দ্রুত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
কর্মচঞ্চলতার অভাবে বিপাক প্রক্রিয়া ও ক্যালরি খরচের গতি ধীর হয়। ব্র্যাডি বলেন, “অলস জীবন ও কম ব্যায়ামের কারণে পেটসহ শরীরের সার্বিক চর্বি খরচের পরিমাণ কমে যায়।”
এই সমস্যা সমাধান করতে ফোনে ‘রিমাইন্ডার’ সেট করে দিতে হবে। সেটা হতে পারে আধা ঘণ্টা পর পর উঠে একটু হাঁটাচলা করা, শুয়ে টিভি না দেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা বা ঘরের মধ্যেই পায়চারি করতে করতে বই পড়া। এক্ষেত্রে ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে অলসভাবে বসে থাকা যাবে না।
ব্র্যাডি পরামর্শ দেন যে, “ব্যায়ামের চর্চায় ভারোত্তলন যোগ করলে পেশি গঠনের পাশাপাশি বিপাকক্রিয়া বাড়ে যা চর্বি গলাতে সহায়ক। পাশাপাশি জগিং, সাইকেল চালনা বা সাঁতার কাটতে পারলে ক্যালরি আরও বেশি খরচ করা সম্ভব। আর এসবই চর্বি দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
অসামঞ্জস্যপূর্ণ খাওয়া
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবার বেশি খেলে পেটের চর্বি কখনই কমবে না। বরং ওজন আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে ব্যায়ামও কোনো কাজে আসবে না।
তাই সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস রাখতে হবে। এজন্য ডিম, ওটস, মিষ্টি আলু, মাছ, বাদাম ও বীজ, কলা, শুঁটি- এসব খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনবেলার খাবার ছাড়াও নাস্তাতেও এসব খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন, লিসা ইয়ং।
অ্যালকোহল
অতিরিক্ত মদ্যপান করলেও পেটের মেদ কমানো সম্ভব হয় না। লিসা ইয়ং ব্যাখ্যা করেন, “অ্যালকোহল যেভাবেই গ্রহণ করা হোক- এতে ক্যালরির মাত্রা প্রচুর। তাছাড়া ক্ষুধাও বাড়ায় ফলে অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়। তাছাড়া শরীর চর্বি পোড়ানোর চাইতে অ্যালকোহল হজম করার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।” তাই পেটের মেদ কমাতে মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে, ছাড়তে হবে।
বংশগতি ও হরমোনের প্রভাব
উপরের সব বিষয় নিয়ন্ত্রণে আনার পরেও যদি কোনো কাজ না করে তবে হরমোন আর বংশগতির দিকে নজর দিতে হবে।
ব্র্যাডি বলেন, “কারও কারও বংশের ধারা হিসেবে শরীরে বা পেটে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা যেমন- ‘ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স’ বা উচ্চ মাত্রায় ইস্ট্রোজেনের প্রভাবেও পেটের চর্বি গলানো দুষ্কর হতে পারে।”
তাই পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসার সঠিক পদ্ধতি বেছে নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।