পরকীয়াকে ফের অপরাধের তালিকায় আনার সুপারিশ

পরকীয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাঁচ বছর আগে পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধ নয় বলে ছাড় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ‘বিয়ে’ নামক ‘পবিত্র বন্ধন’কে রক্ষা করতে ফের পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে দণ্ড সংহিতা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে। সরকারের ওই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই সুপারিশ এনে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা করা হয়েছে।

পরকীয়া

ভারতীয় দণ্ডবিধিকে ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত করে তাকে সময়োপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে গত বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিল আনে সরকার। বিল লোকসভায় পেশ করেই তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত সপ্তাহে বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও ওই সংক্রান্ত রিপোর্টটি স্থায়ী কমিটিতে গৃহীত হয়।

বিরোধীদের অভিযোগ, গোড়া থেকেই ওই তিনটি বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে সরকার। আমজনতার জীবনের সঙ্গে জড়িত হওয়া সত্ত্বেও ওই তিনটি আইন নিয়ে যতটা সময় ধরে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তা তারা করেনি। পাশাপাশি যে ভাবে ওই ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (অতীতের ভারতীয় দণ্ডবিধি)-তে পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, তার সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ ডেরেকের ধাঁচে আজ কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘৯৫ শতাংশ পুরনো আইনকেই নতুন মোড়কে পেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসায় আইনজীবী, বিচারক, পুলিশকে আবার নতুন করে ওই আইন মুখস্থ করতে হবে।’’ পাশাপাশি দণ্ড সংহিতায় হিন্দিকে প্রাধান্য নিয়ে বাংলা, গুজরাতি, তামিলভাষীদের অপমান করা হয়েছে বলে সরব হয়েছেন চিদম্বরম। ডেরেকের কথায়, ‘‘বিলের সব ধারা ও উপধারা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের যাঁদের আসার কথা ছিল, তাঁরাও আসেননি। কেবল বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কিছু বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে।’’

দণ্ড সংহিতা সম্পর্কিত রিপোর্টে পরকীয়াকে ফের ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নয় বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। পাঁচ বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, পরকীয়া বা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ফৌজদারি অপরাধ নয়। দণ্ডবিধিতে ওই সংক্রান্ত ৪৯৭ ধারাটি অসংবিধানিক। ওই ধারায় বলা ছিল, কোনও ব্যক্তি কোনও বিবাহিত মহিলার সঙ্গে তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করলে ওই মহিলার পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা উভয়ই হতে পারে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, ব্রিটিশদের তৈরি করা এই আইন সেকেলে, একতরফা ও বৈষম্যমূলক। এই আইন মহিলাদের মর্যাদাকে খর্ব করে। ফলে ধারাটি বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ফের ওই আইনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘বিয়ের মতো পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে ওই ধারা বজায় রাখা হোক।’’ অতীতে কেবল স্বামীই পরকীয়ার অভিযোগ আনতে পারতেন। কিন্তু নতুন নিয়মে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে-অপরের পরকীয়ার অভিযোগ আনতে পারবেন।

আর্থিক অপরাধে ধৃত ব্যক্তিদের পুলিশি হেফাজতে হাতকড়া না পরানোর পক্ষে সওয়াল করেছে কমিটি। পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধীদের ধর্ষণ বা খুনের মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে একসঙ্গে যাতে না রাখা হয়, তারও সুপারিশ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা জঘন্য ধাঁচের অপরাধে (ডাকাতি, খুন বা ধর্ষণ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, বেআইনি অস্ত্র রাখা, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার) যুক্ত, একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই পালিয়ে যাওয়া রুখতে এবং পুলিশ কর্মীদের সুরক্ষার প্রশ্নে হাতকড়া লাগানো যেতে পারে। কিন্তু যারা ছোটখাটো আর্থিক অপরাধ করেছে, তাদের হাতকড়া থেকে বাদ রাখা হোক। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-র ৪৩ (৩) ধারায় হাতকড়া পরানোর ক্ষেত্রে তাই আর্থিক অপরাধে অভিযুক্তদের বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

হোয়াটসঅ্যাপে যে সব মেসেজে ভুলেও ক্লিক করা যাবেনা, সতর্ক থাকুন

রিপোর্টে ‘মেন্টাল ইলনেস’ বা মানসিক অসুস্থতা শব্দটি ব্যবহারের পরিবর্তে ‘আনসাউন্ড মাউন্ড’ শব্দবন্ধটি ব্যবহারের সুপারিশও করা হয়েছে। কমিটির বক্তব্য, মানসিক অসুস্থতা শব্দটির পরিধি অনেক বড়। যার আওতায় অনেক কিছুই চলে আসে। সামান্য মুড সুইং বা মেজাজের পরিবর্তন কিংবা সাময়িক নেশাগ্রস্ত থাকাও মানসিক অসুস্থতার আওতায় আসে। মানসিক অসুস্থতা কোনও অপরাধীর মুক্তি পাওয়ার কারণ হতে পারে না। এর জন্য আইনি প্রমাণ পেশ করতে হবে ধৃত ব্যক্তিকে।