জুমবাংলা ডেস্ক : আইনজীবীর ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে লিখিত চুক্তি থাকতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবার ফি পরিশোধে মক্কেলকে (ক্লায়েন্ট) দিতে হবে রসিদ। ফির পরিমাণ, পরিশোধের তারিখ, সংশ্লিষ্ট মামলার বিবরণ এবং আইনজীবীর স্বাক্ষর থাকবে রসিদে।
কমিশনের প্রতিবেদনে আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়নে স্থায়ী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সুপারিশের পাশাপাশি অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ঢাকায় অন্তত পাঁচটি এবং প্রতি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সদন প্রাপ্তির পরীক্ষার সিলেবাসে পরিবর্তন আনার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির পরীক্ষা মূলত সাতটি বিষয়ের ওপর হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, দ বিধি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, তামাদি আইন, সাক্ষ্য আইন এবং বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস। পাশের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রচলিত মামলার ধরন বিবেচনায় সনদ প্রাপ্তির পরীক্ষার সিলেবাসে আরও কিছু অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এর মধ্যে পারিবারিক আইন, অর্থঋণ আদালত আইন, নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, শ্রম আইন অন্যতম। বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো, মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আইনজীবীদের সম্যক ধারণা প্রদানের জন্য সাংবিধানিক আইন সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করে সংস্কার কমিশন। প্রশিক্ষণের বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন জরুরি। আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পর প্রথম ছয় মাসে আর্থসামাজিক ও পেশাগত বাস্তবতার নিরিখে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির হার অসন্তোষজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার ও বার কাউন্সিল অর্ডার এবং এর অধীন প্রণয়ন করা বিধিমালায় আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। তবে বার কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দায়ের করা ৪০১টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৪০টি। তাই আইনজীবীর সংখ্যা এবং দাখিল করা অভিযোগের সংখ্যা বিবেচনা করে অবিলম্বে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
সুপারিশে আইনজীবীদের পেশাগত বিধিমালা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, ওই বিধিমালায় বর্তমানে আইন পেশায় বিদ্যমান শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে নতুন বিধি সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া এ পেশাগত বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, বার কাউন্সিলের আদেশে আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা থাকতে হবে। ওই সংজ্ঞায় আইনজীবীর পেশাগত দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত বা গুরুতর অবহেলা, অসততা, দুর্নীতি, মক্কেলের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ, আইন লঙ্ঘনের পরামর্শ, আদালতের প্রতি অসম্মান, সহকর্মীদের প্রতি অসদাচরণ এবং বার কাউন্সিলের নির্দেশনা ভঙ্গের বিষয়গুলো যুক্ত করতে হবে। আইনজীবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক অভিযোগ দায়েরের কারণে আইনজীবীর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে জরিমানার বিধান যুগোপযোগী করা প্রয়োজন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে আদালতে এজলাস কক্ষের পাশাপাশি সেরেস্তা, নেজারতখানা, রেকর্ডরুম, নকলখানা এবং আদালতের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। উল্লেখ্য, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে এ প্রতিবেদন তুলে দেয়। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ৩ অক্টোবর। ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩১ অধ্যায়ে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।