স্পোর্টস ডেস্ক : চমৎকার বোলিংয়ে সুর বেঁধে দিলেন নাসুম আহমেদ। দারুণ সঙ্গত করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই স্পিনারের সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় বাকিটা সহজে সারলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে গেল বাংলাদেশ।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০৮ রান পেরিয়ে গেছে ১৭৬ বল বাকি থাকতে। ৩ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
ওয়ানডেতে এ নিয়ে পঞ্চমবার ৯ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ, চলতি বছর দ্বিতীয়বার। এই জয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রাখল এবার।
নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটনকে নিয়ে তামিম কাজ শেষ করেন সহজেই। তবে আগেই মূল কাজটা করে দেন বোলাররা। তাদের দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেশের মাটিতে তাদের এরচেয়ে কম রান আছে কেবল একটি।
ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে বেশি ভোগান নাসুম। আগের ম্যাচে অভিষেকে দারুণ বোলিং করলেও উইকেটশূন্য ছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। এবার ১৯ রানে নেন তিনটি। তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
অফ স্পিনার মিরাজ চার উইকেট নেন ২৯ রানে। নুরুল হাসান সোহান এক বলে দুই সুযোগ হাতছাড়া না করলে হয়তো ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেতে পারতেন তিনি।
পরিস্থিতি যেমনই হোক ওয়ানডেতে তিন পেসার নিয়েই খেলছিল বাংলাদেশ। তবে গায়ানার উইকেটে স্পিনারদের জন্য দারুণ সহায়তা থাকায় গতিময় পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকে খেলায় সফরকারীরা।
সুযোগ পেয়ে খারাপ করেননি মোসাদ্দেক। ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে ১০ ওভার করলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে কোনো জুটি ছুঁতে পারেনি ত্রিশ। কোনো ব্যাটসম্যান ছাড়াতে পারেননি ২৫। শুরুর জুটিই স্বাগতিকদের সেরা। ২৭ রান করতে কাইল মেয়ার্স ও শেই হোপ খেলেন ৬৩ বল। এরপর কেবল দুটি জুটি পারে বিশের ঘরে যেতে।
আগের ম্যাচের ব্যর্থতা থেকেই হয়তো শুরুতে অতি সাবধানী ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার চেষ্টায় ছিলেন মেয়ার্স ও হোপ।
শুরুতেই তাদের বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ফিল্ডার থ্রো স্টাম্পে লাগাতে না পারায় রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান মেয়ার্স। সে সময় ৪ রানে ছিলেন তিনি।
মোসাদ্দেকের জায়গায় বোলিংয়ে এসেই উইকেট পেতে পারতেন মিরাজ। এই অফ স্পিনারের এক ডেলিভারিতে হোপের ক্যাচ ছাড়েন ও স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেন সোহান। সে সময় হোপ ছিলেন ৪ রানে।
পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই তাদের দিক হারানোর শুরু। একাদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে শুরুর জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক। দারুণ এক ডেলিভারিতে মেয়ার্সকে বোল্ড করে দেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেন বাঁহাতি ওপেনার। প্রথম ওয়ানডেতে অনেকটা এভাবেই মিরাজের বলে বোল্ড হয়েছিলেন তিনি।
প্রথম ১০ বলে কেবল ১ রান করা শামার ব্রুকস মিড উইকেট দিয়ে চার মারেন নাসুমকে। এক বল পর চমৎকার এক ডেলিভারিতে এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম উইকেট নেন নাসুম।
বাঁহাতি এই স্পিনারের জন্যই হোপকে জীবন দেওয়ার চড়া মাশুল দিতে হয়নি এবার। রানের জন্য সংগ্রাম করা ওপেনার স্লগ করার চেষ্টায় ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। কিছুটা পিছন দিকে গিয়ে কাঁধের উপর দিয়ে আসা ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক।
এক বল পর নাসুম ধরেন আরেকটি বড় শিকার। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শূন্য রানে বিদায় নেন নিকোলাস পুরান। গ্লাভসে লেগে ‘প্লেইড অন’ হয়ে যান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা তখন মহাবিপদে। প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপ ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাতেই কিনা, ক্রিজে গিয়েই শট খেলার চেষ্টা করেন রভম্যান পাওয়েল। দুটি বাউন্ডারিও আসে তার ব্যাট থেকে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামকে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন আরেকটি। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় মাহমুদউল্লাহর হাতে।
এরপর ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস দ্রুতই গুটিয়ে দেন মিরাজ। ব্র্যান্ডন কিংকে বোল্ড করে শুরু করেন শিকার। পরের বলে রান আউট হয়ে যান আকিল হোসেন।
দলে ফেরা কিমো পলের ব্যাটে পরপর দুটি চার হজম করলেও নড়ে যায়নি মিরাজের আত্মবিশ্বাস। পরের ওভারে পরপর দুই বলে রোমারিও শেফার্ড ও আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। তবে তা হতে দেননি গুডাকেশ মোটি। পরে তাকেই এলবিডব্লিউ করে ক্যারিবিয়ানদের ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ।
চারটি চারে ২৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার পল।
রান তাড়ায় শুরুতেই চমক দেখায় বাংলাদেশ। তামিমের সঙ্গে লিটনের জায়গায় ওপেনিংয়ে নামেন শান্ত। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের পর প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেন এই তরুণ।
তবে আরও একবার ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি শান্ত, হাতে অঢেল সময় থাকলেও পারেননি ম্যাচ শেষ করতে। মোটির আপাতত সাদামাটা এক ডেলিভারিতে সীমানায় সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন শান্ত। ৩৬ বলে দুই চারে তিনি করেন ২০। ভাঙে ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দুই বাঁহাতি স্পিনারের কথা চিন্তা করেই হয়তো লিটনকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়নি। তবে ক্রিজে যাওয়ার পর আকিল ও মোটির বিপক্ষে তিনি ছিলেন সাবলীল। পেসও খেলেন অনায়াসে। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটিতে ৬ চারে ২৭ বলে তিনি করেন ৩২।
স্পিনারদের জন্য উইকেটে সহায়তা ছিল প্রবল। টার্ন ছিল বেশ, গ্রিপ করছিল, বাউন্সও ছিল অসমান, দুয়েকটা বল খুব নিচুও হয়। তবে এর মধ্যেই রানের গতি সচল রাখেন তামিম। স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ কিছু রিভার্স সুইপও খেলতে দেখা যায় বাঁহাতি ওপেনারকে।
চার মেরে ম্যাচ শেষ করার সঙ্গে ক্যারিয়ারে ৫৩তম ফিফটি স্পর্শ করেন তামিম। ৬২ বলে খেলা তার ৫০ রানের ইনিংসটি গড়া ৭ চারে।
আগামী শনিবার একই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৫ ওভারে ১০৮ (হোপ ১৮, মেয়ার্স ১৭, ব্রুকস ৫, কিং ১১, পুরান ০, পাওয়েল ১৩, আকিল ২, পল ২৫*, শেফার্ড ৪, জোসেফ ০, মোটি ৬; মোসাদ্দেক ১০-০-৩৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১২-০, মিরাজ ৮-১-২৯-৪, নাসুম ১০-৪-১৯-৩, শরিফুল ৩-০-৯-১)
বাংলাদেশ: ২০.৪ ওভারে ১১২/১ (তামিম ৫০*, শান্ত ২০, লিটন ৩২*; জোসেফ ৩-০-৭-০, আকিল ৬-০-৩৫-০, মোটি ৭.৪-১-৩৯-১, পুরান ২-০-১৪-০, পল ২-০-১৬-০)
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।