জুমবাংলা ডেস্ক : মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কক্সবাজারে চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৩১ হাজার টন লবণ উৎপাদন করেছেন তারা। আশানুরূপ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গত ৬৪ বছরের ইতিহাসকে পেছনে ফেলেছে লবণশিল্প।
গত দুই মাস বয়ে চলা তীব্র দাবদাহের কারণে উৎপাদনের এ আধিক্য বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।
চাষিরা বলছেন, মৌসুম শুরুর সময় লবণের যে দাম পাওয়া গেছে এখন তা নেই। দাম না কমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে সামনের দিনগুলোতে লবণ চাষে আরো চাষি বাড়তে পারে।
বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬৮ হাজার ৩০০ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এবারে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। এরই মধ্যে উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ২৩ লাখ ৩১ হাজার টন। যা অতীতের সব ইতিহাসকে পেছনে ফেলেছে। অথচ গত বছর ৬৬ হাজার ৪২৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ টন। চলতি লবণ মৌসুমে লবণচাষির সংখ্যা ৪০ হাজার ৭০০ জন, যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৪০০ জন। ফলে গেল বছরের তুলনায় এ বছর লবণচাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৩০০ জন।
অনুকূল আবহাওয়া ও গত বছর লবণের ন্যায্যমূল্য থাকায় এবারে লবণ চাষ বেশি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। চাষিদের নিরাপত্তা, লবণ আমদানি বন্ধ এবং ন্যায্যমূল্য পেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি লবণ চাষ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
ঈদগাঁওর গোমাতলী এলাকার লবণচাষি রিদুয়ানুল হক বলেন, এবার মৌসুম শুরুর পর হতে প্রকৃতিতে বৃষ্টি নেই বললে চলে। এর বিপরীতে বহমান ছিল তীব্র রোদ। ফলে লবণ উৎপাদন বেশি হয়েছে। ভোগান্তি গেলেও লবণ চাষ সংশ্লিষ্টরা বেজায় খুশি।
খুরুশকুলের রাস্তারপাড়ার লবণচাষি বেলাল আহমদ বলেন, জমির ইজারা, পলিথিন ও শ্রমিকের মূল্য চড়া হলেও লবণ উৎপাদন বেশি হওয়ায় লোকসানের হাত থেকে বাঁচবেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে লবণের দাম ভালো থাকলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম এখন নিম্নগামী। এভাবে চললে শেষমেশ লোকসান গুনতে হবে।
বাংলাদেশ লবণচাষি পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম জানান, এ বছর চাষিরা রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন করেছেন। গত কয়েক বছর আমদানি বন্ধ থাকা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়ায় চাষিরা লবণ উৎপাদন বাড়াতে আন্তরিকভাবে শ্রম ব্যয় করেছেন। এবারের উৎপাদনও বাড়ায় আমদানির চিন্তা এখনো করতে হবে না। আমাদের প্রত্যাশা দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে চাষিরা এবারও ন্যায্যমূল্য পাবেন।
ভালো দামের আশায় অনেক কৃষক মাঠেই লবণ মজুত করছেন। কিন্তু বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় দামের কিছুটা হেরফের হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, লবণ উৎপাদনে গত ৬৪ বছরের ইতিহাস ভেঙে এবার রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। দৈনিক গড় উৎপাদনও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। আগে যেখানে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, সেখানে এ রেকর্ড ছাড়িয়ে দৈনিক গড়ে ৩৯ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে।
বিসিকের কক্সবাজার লবণশিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, চলতি সৌমুমে আমাদের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। গেল কয়েক দিন আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকায় মাঠ ছেড়েছেন কৃষকরা। কিন্তু এরই মধ্যে উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ২৩ লাখ ৩১ হাজার টন। যা অতীতের সব ইতিহাসকে টপকে গেছে। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে কিংবা বৃষ্টিপাত না হলে মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত আরও প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টন উৎপাদন হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।
তিনি বলেন, গত মৌসুমে লবণের দাম ভালো থাকায় চাষিরা এ মৌসুমে আরও বেশি জমিতে চাষ করেছেন। গত বছর ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ টন। কিন্তু চলতি মৌসুমে চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ হাজার ৩০০ একর হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় লবণ আমদানি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে না। কোনো পরিকল্পনাও নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।