জুমবাংলা ডেস্ক : নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা পর্যটন এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক দর্শনীয় স্থান। চারদিকে পাহাড়-টিলা আর চা বাগানের সবুজের সমারোহ। চা বাগান মানেই সবুজের অবারিত সৌন্দর্য।
শহর থেকে যেকোনো সড়ক ধরে হাঁটাপথ দূরত্বে পৌঁছামাত্র চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল চা বাগান। চা বাগানের বেষ্টনির মাঝে ছোট শহর শ্রীমঙ্গল। চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর মনে হবে কোনো চিত্রশিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে সবুজ-শ্যামল মাঠ তৈরি করে রেখেছে। সেই সবুজ বাগানের মধ্যদিয়ে বয়ে চলেছে একটি আঁকাবাঁকা লাল মাটির রাস্তা। যে রাস্তার মাটির রঙ লাল। টিলা থেকে মনে হয় দূরের আকাশ যেন মাটিতে মিশেছে। চার দিকে পাহাড়-টিলার ভাঁজে ভাঁজে চা বাগান ঘেরা এ লাল টিলায় এলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এখানে এলে চোখে পড়বে দু’পাশে স্নিগ্ধ-সবুজ চা বাগানের সমারোহ। মাঝে পিচঢালা পথ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের ফিনলে টি কোম্পানির ফুলছড়া চা বাগানের পাঁচ নম্বর সেকশনের অবস্থিত ‘লাল টিলা’। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৪ কিলোমিটারের পথ। ফুলছড়া চা বাগানের প্রবেশ পথের প্রথম নিরাপত্তা গেট পেরিয়ে বাঁ দিকে চলে গেছে একটি সরু কাঁচা রাস্তা। চার দিকে পাহাড়, টিলা আর চা বাগানের সবুজের সমারোহ। সেই সবুজের বুকে লাল মাটির টিলা কেটে বাগানের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। বিটিআরআই`র সড়ক দিয়ে গেলে মাঝে অতিক্রম করতে হবে একটি ছড়া (নদী)। পানি কম থাকায় ছড়া পার হতে নেই তেমন কোনো ঝামেলা। ছড়া পেরিয়ে আবার চা বাগানের ভেতর দিয়ে পথচলা।
দু’পাশে সারি সারি চা বাগানের পাশে দেখা মিলবে দুর্গম পাহাড়েরও। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উঠতে হবে লাল টিলার চূড়ায়। টিলায় ওঠার জন্য পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে একটি আকাবাঁকা রাস্তা। রাস্তাটি গিয়ে মিশেছে একটি পাহাড়ে, লাল মাটির পাহাড়ে। সমতল থেকে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু। পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে বানানো সিঁড়ি। লাল মাটির রাস্তা ধরে পাহাড়ের একটু ওপরে উঠলেই চোখে পড়ে লাল টিলার কালীমন্দির। পাহাড় শিখরের দুই পাশে দু’টি মন্দির। একটি কালীমন্দির, অন্যটি শিবমন্দির। লাল মাটির পাহাড়ে ধবধবে সাদা শিবমন্দিরটিও বেশ আকর্ষণীয়। এখানকার মাটির রঙ লাল হওয়ায় এ টিলার নাম ‘লাল টিলা’ হলেও কালীমন্দিরের কারণে এটি আসলে কালী টিলা নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। উঁচু পাহাড় পেরিয়ে সমতল থেকে প্রায় ২০০ ফুট ওপরে টিলার ওপর উঠে দর্শনার্থীরা হারিয়ে যান টিলার পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে।
টিলার যেদিকে দৃষ্টি ফেরাবেন সেদিকেই শুধু গাঢ় সবুজের ছড়াছড়ি। এই টিলার ওপর দাঁড়িয়ে মনে হবে দিগন্ত রেখায় আকাশ আর মাটি যেন তাদের দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। লাল পাহাড়ের চারপাশে সবুজ গাছগাছালি। পাহাড় চূড়ার চারপাশে যত দূর দৃষ্টি যায় গাঢ় সবুজের আচ্ছাদন। নীল আকাশ যেন তাতে গিয়ে মিশেছে। শোঁ শোঁ বাতাস। সব কিছু মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন লাল টিলা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে শুধুই সবুজের সমারোহ। টিলা থেকে মনে হয় দূরের আকাশ যেন মাটিতে মিশেছে। প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের সমাগম হচ্ছে।
পর্যটকরা নিচ্ছেন অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাদ। তবে আগত অনেক দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে পানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় এত উচু যায়গায় উঠে অনেকেই পানির জন্য সমস্যায় পড়েন। তাছাড়া পাহাড়ের চুড়ায় উঠার রাস্থাটি চলাচলের জন্য খুবই বিপদজনক। তাই এখানে যদি খাবার পানির জন্য একটি গভীর নলকুপ স্থাপন এবং রাস্থা মেরামত করা হলে দর্শনার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে। চা বাগানের অভ্যন্তরে এবং লাল টিলায় প্রবেশ করার আগে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া ভালো। শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোড অথবা ভানুগাছ রোডের বিটিআরআই হয়ে জিপ, অটোরিক্সা, মোটর সাইকেল কিংবা যেকোনো প্রাইভেট গাড়ি দিয়ে ফুলছড়া চা বাগানের প্রবেশপথের প্রথম নিরাপত্তা গেট পেরিয়ে বাঁ দিকে চলে যাওয়া সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে লাল টিলায় পৌছা যাবে। শহর থেকে প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।