জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জেলার ৭টি থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ প্রতিদিনই গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। গ্রেপ্তার থেকে বাদ যাচ্ছে না নিরীহ-নিরপরাধ মানুষও। ফলে স্বজনদের আহাজারিতে আদালতপাড়ার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। তাদের অভিযোগ, নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধরে পুলিশ বিএনপি আখ্যা দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে।
গতকাল সরজমিন নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া ও গারদের সামনে দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারির এমন চিত্র। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের একনজর দেখতে ও জামিনের জন্য ভিড় করছেন তাদের আত্মীয়স্বজন। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার গারদের সামনে বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছেন তার সন্তানের জন্য। স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন তার স্বামীর জন্য। নানি দাঁড়িয়ে আছেন তার নাতির জন্য। একনজর দেখার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে খাবার নিয়ে, আবার কেউ দাঁড়িয়ে আছেন কাপড়- চোপড় নিয়েও। সবারই চোখে মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।কপালে চিন্তার ভাঁজ।
গারদের সামনে জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তার স্বামী একজন পাঠাও চালক হোসাইন মাহমুদ (২৬)। তাকে একনজর দেখার জন্য কোলের শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। হোসাইন মাহমুদ ফতুল্লার ভূঁইগড় রূপায়ণ এলাকার মৃত: আঃ আলীর ছেলে। মিতু বলেন, কোটা আন্দোলনের কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে তার স্বামী বাসায়। ছোট্ট শিশুর খাবার দুধ শেষ। প্রতি সপ্তাহে এক প্যাকেট দুধ লাগে। আর বাসায় টাকা নেই যে দুধ কিনে আনবে। তখন আমার স্বামী বললো এখন তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক তাহলে দুই-তিনটা ট্রিপ মেরে পোলার (ছেলে) দুধ কিনে নিয়ে আসি। এই বলে দুপুরে বের হয়। রাত ৯টার দিকে বাসায় ফেরার পথে ভূঁইগড় রূপায়ণের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। শুনছি তাকে নাকি বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজকে উকিল সাহেব জামিন চাইছিল, আদালত দেন নাই বললো। তিনি আরও বলেন, আপনারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি কাজ করে সংসার চালায়। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামী জেলখানায়। কবে জামিন পাইবো তাও জানি না। আমি এখন আমার দুধের বাচ্চা ও অন্ধ শাশুড়িকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
একইভাবে মামলার আসামি হয়েছেন রাজমিস্ত্রি আরিফ হোসেন (১৯)। সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পরশমদী গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে সে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গারদের সামনে মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে করতে আরিফ হোসেনের নানি জনু বেগম বলেন, ছয় মাসের একটি শিশু বাচ্চা আছে আরিফের। আমার নাতি রাজমিস্ত্রির কাম করে বাবা। আমি আমার নাতির সঙ্গে খাই। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমায়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি তাদেরকে বলছি আমার নাতি রাজমিস্ত্রির কাম করে সে বিএনপি করে না। তারা আমার কথাটাও শুনলো না। আমার নাতিরে ধরে নিয়ে নাশকতার মামলা দিলো। আল্লাহ তুমি এদের বিচার কইরো। যারা আমার নিরপরাধ নাতিকে বিনা দোষে দোষী করলো। আমি এখন কেমনে কি করবো। মাহমুদ ও আরিফের মতো এমন অনেক নিরপরাধ মানুষকে আটক করে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে পুলিশ। রাত পোহালে থানায় ভিড় করছেন স্বজনরা। থানা থেকে কিছু করতে না পেরে ছুটে আসছেন আদালতপাড়ায়।
এদিকে শনিবার রাতে নতুন করে আরও ৩টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার সংখ্যা ২৭। গতকাল সকাল পর্যন্ত এই মামলাগুলোতে ৫১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম-অপারেশন) চাইলাউ মারমা জানান, ২৭ জুলাই হতে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় ভবন কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া পুলিশ বক্সে ভাঙচুরের ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ এবং র্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সূত্র : মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।