মাওলানা নোমান বিল্লাহ : তওবা করা একটি ইবাদত। কখনো গুরুতর পাপ করে ফেললে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। আল্লাহ তাআলা কাউকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। কারও পাপের বোঝা যতই ভারি হোক না কেন তার উচিত তওবার পথে হাঁটা।
হাদিসে অসংখ্য তওবার ঘটনা বর্ণিত আছে। যেগুলো আমাদেরকে তওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে। নিচে তওবার আশ্চর্য ঘটনাবলির মধ্য থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো।
হজরত আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের পূর্বে (বনি ইসরাইলের যুগে) একটি লোক ছিল যে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। তারপর লোকেদেরকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জ্ঞানী সম্পর্কে জানতে চাইলো। তাকে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রির কথা বলা হল।
সে ওই পাদ্রির কাছে এসে জানালো, সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোনো সুযোগ আছে কি না। পাদ্রি জানালো, না, নেই। সুতরাং সে রাগান্বিত হয়ে তাকেও হত্যা করে হত্যার সংখ্যা একশত পূরণ করল। পুনরায় সে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জ্ঞানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। এবারও তাকে এক জ্ঞানীর খোঁজ দেয়া হল।
সে ওই জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট এসে জানালো যে, সে একশত মানুষ হত্যা করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোনো সুযোগ আছে?’ জ্ঞানী ব্যক্তি বললো, ‘হ্যাঁ আছে তো। তোমার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ আবাসস্থলে ফিরে যেও না। কেননা, ও স্থান পাপের স্থান।
ওই ব্যক্তি সে স্থানের দিকে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। তার দেহ থেকে আত্মা বের করার জন্য রহমত ও আজাবের উভয় প্রকার ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করতে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’
আর আজাবের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এ লোক এখনো ভালো কাজ করেনি এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত।’ এমতাবস্থায় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফেরেশতাগণ তাকে সালিশ মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দুই স্থানের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ লোক যে স্থান থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুই স্থানের মধ্যে সে যার দিকে বেশি নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তারা দূরত্ব মাপলেন এবং যে স্থানে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) স্থানকে বেশি নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফেরেশতাগণ তার জান কবজ করলেন।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় এমন এসেছে যে, আল্লাহ তাআলা ওই স্থানকে (যেখান থেকে সে আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে যাও এবং এই সৎকর্মশীলদের স্থানকে আদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও। তারপর বললেন, ‘তোমরা এ দুইয়ের দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং তাকে সৎকর্মশীলদের স্থানের দিকে এক বিঘত বেশি নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।