স্পোর্টস ডেস্ক : ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কোর্টে রজার ফেদেরারের হাতে ব্যাট দেখা গেছে। কিন্তু সেটা তো লেভার কাপ নামের প্রায় পিকনিক মুডের টুর্নামেন্টে নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে। এর দুই মাস আগেই র্যাঙ্কিংয়ের বাইরে চলে গেছেন তিনি। আর সর্বশেষ কোনো টুর্নামেন্টে তাঁকে দেখা গেছে ২০২১ উইম্বলডনে।
অথচ, দুই বছর পর যখন আরেকটি উইম্বলডনের শিরোপা কে জিতবেন, সে আলোচনা চলছে, তখন ফোর্বস জানিয়ে দিল গত এক বছরে বিশ্বের সবচেয়ে আয় করা অ্যাথলেটদের মধ্যে নবম ফেদেরার। শীর্ষ ৫০ অ্যাথলেটের মধ্যে আর কোনো পুরুষ টেনিস তারকা নেই। অর্থাৎ, অবসরের এক বছর পরও ফেদেরার আয়ের দিক থেকে নোভাক জোকোভিচ, রাফায়েল নাদালদের নাগালের অনেক অনেক বাইরে।
ফোর্বস জানিয়েছে ২০২২ সালের মে মাস থেকে পরবর্তী এক বছরে ফেদেরার ৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার (১ হাজার ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা) আয় করেছেন। অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর নাদালের সঙ্গে জুটি বেধে একটি ডাবলসের ম্যাচ খেলেছেন। তার আগে ১৪ মাস কোর্টে দেখা যায়নি তাঁকে। এমন একজন কীভাবে এত টাকা আয় করলেন?
ফোর্বস একটু ইঙ্গিত দিয়েছে। টেনিস থেকে গত এক বছরে ফেদেরার আয় করেছেন মাত্র ১ লাখ ডলার। বাকি ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারই টেনিস বহির্ভূত আয়। শুনলেই মনে হতে পারে, স্পনসরের কাছ থেকেই এত অর্থ পেয়েছেন।
অসম্ভব কিছু না। কিন্তু স্পনসরদের কাছে একজন অবসরপ্রাপ্ত টেনিস তারকা অত গুরুত্বপূর্ণ নন। আর স্পনসরদের কাছ থেকে ফেদেরার তাঁর ক্যারিয়ারের মধ্যগগণেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, টাইগার উডস বা বাস্কেটবল ও রাগবি তারকাদের মতো অর্থ পাননি। তাহলে কীভাবে এখনো এত খেলোয়াড়ের ভীড়েও শীর্ষ দশে জায়গা করে নিচ্ছেন ফেদেরার?
দূরদর্শী চিন্তা ও দুর্দান্ত ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে!
ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে ২০ বছরের বেশি চুক্তি ছিল ফেদেরারের। কিন্তু ২০১৮ সালে গল্পটা বদলে গেল। চুক্তি নবায়ন করতে গিয়েছিলেন, সেটাই তাঁর শেষ বড় চুক্তি। এমন চুক্তিতে সর্বোচ্চ অর্থ পাওয়ার চেষ্টা করেন সবাই। রোনালদো-বেনজেমা যে কারণে সৌদি আরব গিয়েছেন। মেসি মায়ামিতে গেছেন।
ফেদেরারও তেমনটা চেয়েছিলেন। তখন নাইকির সঙ্গে বাৎসরিক ১ কোটি ডলারের চুক্তি ছিল ফেদেরারের। সে অর্থ আর বাড়াতে রাজি হয়নি নাইকি। আর স্পনসরশিপের দুনিয়ায় অলিখিত একটি নিয়ম আছে, খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতার পেছনে কখনো আয়ের ১০ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না। নাইকি সে সীমা অতিক্রম করেনি। ‘বুড়ো’ ফেদেরারের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দিল নাইকি।
ফেদেরারও বসে থাকলেন না। তিনি হাঁটলেন ডেভিড বেকহামের পথে। ব্যবসায়িক প্রকল্প খুঁজতে লাগলেন। পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো ৩৬ বছর বয়সী ফেদেরারের সঙ্গে চুক্তি করল। ১০ বছরে ৩০ কোটি ডলারের চুক্তি। অর্থাৎ, নাইকি তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ায় উল্টো তিনগুন আয়ের পথ হলো ফেদেরারের।
ইউনিক্লোর চুক্তির আরেকটি চমৎকার দিক, অবসর নিয়ে ফেললেও সমস্যা নেই, ৪৬ বছর পর্যন্ত বছরে ৩ কোটি ডলার পাবেন ফেদেরার। এবং এ চুক্তির পরও জুতার জন্য ফেদেরারের নতুন স্পনসর খোঁজার পথে কোনো বাধা ছিল না।
একদিন অনুশীলনে ‘অন রানিং’ ব্র্যান্ডের জুতা দেখে পছন্দ হয় ফেদেরারের। তখনো অতটা সুপরিচিত ছিল না ব্র্যান্ডটি। ফেদেরার স্বদেশী এই ব্র্যান্ডের শুধু শুভেচ্ছাদূতই হলেন না, এর মালিকানারও কিছুটা কিনে নিলেন। এই ব্র্যান্ডের ৩ শতাংশের মালিক হয়ে গেলেন ফেদেরার।
দুই বছর পরই এই ব্র্যান্ড শেয়ার মার্কেটে ঢুকেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অন রানিং ১৩০ কোটি ডলারের লেনদেন করেছে, আয় করেছে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে ১৮৪ কোটি ডলারের লেনদেন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে অন রানিংয়ের বাজারমূল্য এক হাজার ৬৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ, ফেদেরারের অংশের মূল্য ৩০ কোটি ডলারের বেশি।
অবশ্য ভালো প্রকল্পে বিনিয়োগের অভ্যাস ফেদেরারের বহু আগ থেকেই। ২০০৪ সাল থেকে নেটজেটস এয়ারলাইনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর ফেদেরার। সে সঙ্গে এই কোম্পানির মালিকানাও আছে তার। ২০২২ সালে ২৭০ কোটি ডলার আয় করেছে নেটজেটস। টিম এইট নামের স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট প্রতিষ্ঠানেরও মালিক ফেদেরার। লেভার কাপ আয়োজনের দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের। উঠতি বেশ কিছু টেনিস তারকাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টিম এইট। অর্থাৎ ফুটবল এজেন্টদের মতো টেনিস তারকাদের সবকিছু দেখভাল করে অর্থ পাওয়ার পথ বের করেছে টিম এইট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।