জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্ববাজারে চালের দাম গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে চালের বিকল্প খাদ্য হিসেবে গম আমদানি বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে গত ছরের তুলনায় বেসরকারিভাবে গম আমদানি বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে চালের পরিবর্তে গম বিতরণের পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার।
এ জন্য আগামী অর্থবছর থেকে আরো বেশি গম আমদানি করা হতে পারে।
গতকাল রবিবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সভায় কৃষিমন্ত্রী, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে ১০ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার টন গম দেশে এসেছে। এক লাখ ২০ হাজার টন গম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়। বাকি তিন লাখ ২৪ হাজার টন আমদানি প্রক্রিয়াধীন আছে।
গত অর্থবছর সরকারিভাবে ছয় লাখ ৮৬ টন গম আমদানি করা হয়েছিল।
এদিকে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। বেসরকারিভাবে গম আমদানি করা হয়েছে ৪০ লাখ ৩৭ হাজার টন। গত অর্থবছর বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছিল ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টন। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ২১ শতাংশ গম বেশি আমদানি করা হয়েছে।
রাশিয়া থেকে আসছে সাড়ে ৮ লাখ টন গম
সরকারিভাবে ১০ লাখ টন গমের মধ্যে রাশিয়া থেকে আসছে সাড়ে আট লাখ টন। এর মধ্যে ছয় লাখ টন জিটুজির মাধ্যমে এবং আড়াই লাখ টন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আসবে। এ ছাড়া বুলগেরিয়া, ইউক্রেন ও উরুগুয়ে থেকে ৫০ লাখ টন করে মোট দেড় লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছে সরকার।
খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বদরুল হাসান বলেন, বিশ্ববাজারে এখন চালের দাম অনেক বেশি। আর গমের দাম সে তুলনায় অনেক কম। এ জন্য শুধু সরকারিভাবে গম আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে হবে না। বরং বেসকারি খাতকে বেশি উৎসাহিত ও তদারকি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে টেন্ডারের মাধমে গম কেনা দরকার। একাধিক সোর্স থেকে গম কিনলে তুলনামূলক কম দামে কেনা যাবে। দেশে উৎপাদন বাড়াতে পারলে আরো বেশি ভালো হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, দেশে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গম আমদানি করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা আরো সহযোগিতা চাইলে করা হবে।
সচিব বলেন, ‘সরকারিভাবে এবার একটু বেশি আমদানি করা হচ্ছে, তার উদ্দেশ্য এই নয় যে বাজারে ব্যাপক চাহিদা। বরং চালের মূল্য বিশ্ববাজারে অনেক বেশি, গমের দাম কম। এ কারণে আমরা এবার দুই-তিন লাখ টন গম বেশি আমদানি করছি।’
এসিআই মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘বাজারে চাহিদা তৈরি হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গম আনতে পারবে। কারণ, দেশে বড় কম্পানিগুলো গম আমদানি করে।’
চালের পরিবর্তে গম বিতরণের পরিকল্পনা
সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে চালের পরিবর্তে গম বিতরণের পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। গতকাল এফপিএমসি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছর থেকে গম আমদানি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে পরিবহন খরচ ছাড়া প্রতি কেজি চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তাই সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে চালের পরিবর্তে গম বা আটা দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে এফপিএমসির সভায় আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সিদ্ধান্ত নিলে খাদ্য মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছর থেকে ব্যবস্থা নেবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।