ধর্ম ডেস্ক : একসময় মানুষের জীবন ছিল বরকতে পরিপূর্ণ। কয়েক বছরের ব্যবধানে মানুষের জীবন এখন বরকতশূন্য। বরকতে পরিপূর্ণ জীবন যখন বরকতশূন্য হয় তখন ভাবনার জগতে কঠিনভাবে নাড়া দেয়। ভাবনার কম্পমান রাজ্যে খুঁজে পেলাম অলস ঘুমের বিষয়টি, যা আমাদের বরকতে পরিপূর্ণ জীবনকে করেছে বরকতশূন্য। ভোরের কোমল আলোয় ঘুমোতে কার না ভালো লাগে? শহরে মানুষের প্রধান অনুষঙ্গ ভোরের অলস ঘুম। তারা রাতে দেরি করে ঘুমায়। এর যৌক্তিক কোনো কারণ আছে কি? কারণ যা আছে সেটা হলো গভীর রাত পর্যন্ত টিভির সামনে বসে রিমোট হাতে চ্যানেল ঘোরানো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকতেন না। রাতের খাবার খেয়ে নিতেন এশার নামাজের আগেই। তিনি কর্মতালিকায় এশার পর কোনো কাজ রাখতেন না। শেষ রাতের নীরবতা, ভোরের স্বচ্ছ পরিবেশ, ঝিরঝিরে স্নিগ্ধ হাওয়া এবং বরকতময় সকাল উপভোগ করতে এশার নামাজ শেষে দ্রুত ঘুমিয়ে যেতেন। রাসুল (সা.) উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোরকে বরকতময় করুন।’ রাসুল (সা.) বড় কিংবা ক্ষুদ্র কোনো যোদ্ধাদল কোথাও পাঠালে ভোরেই পাঠাতেন। এ হাদিসের বর্ণনাকারী হজরত সাখার (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়ী কাফেলাকেও কোথাও পাঠালে ভোরে পাঠাতেন। ফলে তিনি ধনী ও প্রভূত সম্পদের অধিকারী হন। (তিরমিজি শরিফ ১২১২)। রাসুল (সা.) অন্যত্র বলেছেন, ‘সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ করো। কেননা সকালবেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)
সকালের অলস ঘুমের কারণে আয়-রোজগারে বরকত কমে যাচ্ছে। ভোরের বাতাসে ভেসে বেড়ায় গাছগাছালি-পাখপাখালি ও সমুদ্রের মাছের জিকির। ভোরের শ্বাস-নিঃশ্বাসে সতেজ হয়ে ওঠে মন-মেজাজ। কর্মসচল হয় মানবদেহ। ফলে দিনটি কাটে উৎফুল্লে। মহান আল্লাহর কাছে ভোরের সময়টা বেশ পছন্দের। তাই তিনি কোরআনে বলেছেন, ‘শপথ প্রভাতকালের, যখন তা আলোকোজ্জ্বল হয়। নিশ্চয়ই জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদগুলোর অন্যতম।’ (সুরা মুদ্দাসসির ৩৩-৩৫) ভোরে সূর্য ওঠে। মক্তবে যায় সোনামণির দল। শিশিরভেজা পায়ে লাঙল কাঁধে হেঁটে চলে কৃষক। কৃষকের মুখে ওঠে আল্লাহ আল্লাহ জিকির। সে সময় ঘুমে বিভোর থাকে অলস যুবক। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন।
জাকাত না দিলে রিজিক হ্রাস পায় : জাকাত ইসলাম একটি মৌলিক বিধান। জাকাতের বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখতে। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হতে পারে, জাকাত দিলে সম্পদ হ্রাস পায়। তা মোটেও নয়। বরং জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদ বাড়ে। সঠিকভাবে জাকাত না দিলে রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হয়। হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত দেওয়া বন্ধ করে দেয় তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পৃথিবীর বুকে যদি কোনো চতুষ্পদ জন্তু না থাকত, তাহলে আর কখনো বৃষ্টি হতো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৯)
গুনাহের কারণে রিজিকে বরকত কমে : গুনাহের কারণে হৃদয় কালো হয়ে যায়। মহান আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে মানবজীবন বরকতশূন্য হয়ে পড়ে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নিশ্চয়ই নেক আমলের প্রভাব হলো, অন্তরের আলো, চেহারার উজ্জ্বলতা, শরীরের শক্তিমত্তা, রিজিকের প্রশস্তি এবং সৃষ্টিকুলের আন্তরিক ভালোবাসা। আর গুনাহের প্রভাব হলো, অন্তরের অন্ধকার, চেহারার কলুষতা, শরীরের দুর্বলতা, রিজিকের সংকট এবং সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহের ঘৃণা ও অপছন্দনীয়তা।’ (রাওজাতুল মুহিব্বিন ৪৪১)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।