আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম ঋষি সুনাক। তিনি মূলত আলোচনায় আসেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর থেকে। মাত্র সাত সপ্তাহ আগে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের কাছে পরাজিত হন। লিজ ট্রাস পদত্যাগের পর আবারও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ।
কে এই ঋষি সুনাক?
১৯৮০ সালের ১২ মে সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন সুনাক। তার পিতা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায় এবং মাতা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান তানজানিয়ায়। তার দাদা-দাদির জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে। তার পিতামহ সন্তানদের নিয়ে ষাটের দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায়।
সুনাক উইনচেস্টার কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং ২০০১ সালে অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি (পিপিই) বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ২০০৬ সালে তিনি স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন।
২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
কর্মজীবন
সুনাক ২০০১ এবং ২০০৪ সালে গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করেন ও পরে হেজ ফান্ড ফার্মের অংশীদার হন। রাজনীতিতে আসার আগে ঋষি একটি বিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ কোম্পানি যুক্তরাজ্যে ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগে সহায়তা করতো। তিনি হেজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ফার্ম দ্য চিলড্রেনস ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্টের জন্যও কাজ করেছেন এবং ২০০৬ সালে কোম্পানির অংশীদার হন। তিনি ২০১০ সালে থেলেম পার্টনারে যোগদান করেন। সুনাক তার শ্বশুরের মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা ক্যাটামারান ভেঞ্চারসের একজন পরিচালকও ছিলেন।
তিনি অক্টোবর ২০১৪ সালে রিচমন্ড (ইয়র্কস) এর জন্য রক্ষণশীল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। একই বছরে তিনি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পলিসি এক্সচেঞ্জের ব্ল্যাক অ্যান্ড মাইনরিটি এথনিক (বিএমই) রিসার্চ ইউনিটের প্রধান ছিলেন।
২০১৫ সালে তিনি ৩৬.২ শতাংশ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসন থেকে এমপি হন। ২০১৫-১৭ সাল থেকে তিনি পরিবেশ, খাদ্য এবং গ্রামীণ বিষয়ক নির্বাচন কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে সুনাক তার আসন থেকে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকারের জন্য সংসদীয় আন্ডার সেক্রেটারি রাজ্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৯ সালে তিনি বরিস জনসন সরকারের ট্রেজারির প্রধান সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন এবং প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যও হন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন।
ঋষি সুনাক তার আগের পদে লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যাওয়ার সময় একাধিক বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি ঘিরে বিতর্ক।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে ঋষি সুনাকের পরিচয় হয়।
সানডে টাইমস ‘রিচ লিস্ট’ অনুযায়ী, স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি এবং সুনাকের যৌথ সম্পদের পরিমাণ ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। এর মধ্যে অক্ষতার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড বলে জানা গেছে। কেনসিংটনে ৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়িসহ এই দম্পতির ‘কমপক্ষে চারটি সম্পত্তি’ রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফরচুনের হিসেব অনুযায়ী, প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মোট সম্পতি ছিল ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের মতো। যদিও বিশেষজ্ঞ ডেভিড ম্যাকক্লুর ২০২০ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য কুইন্স ট্রু ওয়ার্থ’-এ রানির সম্পদ ৪৬৮ মিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছেন। সে হিসেবে বলাই যায় রানির থেকেও ধনী।
চলতি বছর সানডে টাইমসের ধনীদের তালিকায় ঋষি সুনাক এবং তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী ২৫০ জনের তালিকায় তাদের স্থান ২২২তম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।