আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অক্সফোর্ড ও স্ট্যানফোর্ডের ছাত্র ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সম্পত্তি নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে বহু লেখালেখি হয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যম তো কটাক্ষ করে শিরোনামই করেছিল, ‘ঋষি রিচ’ (কার্টুন সিরিজ ‘রিচি রিচ’-এর অনুকরণে)।
এক সাক্ষাৎকারে তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুনাক জানিয়েছিলেন, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আর তিনি কঠোর পরিশ্রমী। তারপরও এত এত সমালোচনার জবাবে গত অগস্টে তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করেন। যা পেয়েছেন, যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছেন, এমনটা ছিলেন না, হয়েছেন।
ঋষির কথায়, ‘বিত্তবান হয়ে জন্মাইনি।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের কাউকে তার ব্যাংক ব্যালান্স নয়, কাজ এবং চরিত্র দিয়ে বিচার করা উচিত।’
পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছাত্রাবস্থায় ছুটির দিনেও কাজ করতেন ঋষি সুনাক। কখনও সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি প্রেসক্রিপশন পৌঁছে দেয়া, কখনও সাউদাম্পটনের হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেছেন ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী। পরে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়।
বদলেছে পরিশ্রমী এবং মেধাবী ঋষির আর্থিক পরিস্থিতিও। ছাত্রাবস্থায় যিনি সিগারেট খাওয়ার মতো কোনও ‘বাজে খরচের নেশা’য় জড়াতে চাননি, তিনিই এখন ব্রিটেনের বিত্তবানদের মধ্যে অন্যতম।
ব্রিটেনের এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে অহরহ খোঁজ চলছে সার্চ ইঞ্জিনে। ঠিক কত সম্পদের মালিক ঋষি? সে তথ্য জানতেও উৎসুক নেটিজেনরা। ভালো হোক বা মন্দ, তাকে নিয়ে যাবতীয় চর্চা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ঋষিও।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ঋষি ও তার স্ত্রী অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩ কোটি পাউন্ড। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৮ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকারও বেশি।
বস্তুত, ব্রিটেনের ২৫০ জন ধনী ব্যক্তি বা পরিবারের তালিকাতেও রয়েছে ঋষিদের নাম। অন্য একটি সূত্র বলছে, তাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
ঋষি এবং তার পরিবারের এই বিপুল সম্পত্তির উৎস কী? তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ব্যবসা এবং হেজ ফান্ড (বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের একটি সীমিত অংশীদারিত্বের ব্যবসা)।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে গভীর আর্থিক সমস্যা থেকে বার করা তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ঋষি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশের আর্থিক মন্দা এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার।
যদিও ঋষির সম্পত্তি নিয়ে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার লেখালেখি হয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যম তো কটাক্ষ করে শিরোনামই করেছিল ‘ঋষি রিচ’।
সেই প্রতিবেদনে ঋষি ও তার ফ্যাশন ডিজাইনার স্ত্রী-র বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ৪ হাজার ৩০০ হাজার পাউন্ডের স্যুটের প্রতি ঋষির আকর্ষণ (যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫ লাখ ২১ হাজার টাকারও বেশি), কোন বিশেষ ব্র্যান্ডের জুতো পরতে ভালবাসেন, সে সব নিয়েও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মধ্য লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ঋষির। একাধিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেই বাড়িতে। শোনা যায়, সেই বাড়িতে পাঁচটি বেডরুম, চারটি গোসলখানা। পাশে বিশাল বাগানও আছে।
বলা বাহুল্য, ঋষির এই বিলাসবহুল বাড়ির দামও অনেক। বাড়িটি প্রায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে কিনেছিলেন ঋষি-অক্ষতা। এখন এই বাড়ির বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকারও বেশি। গত এপ্রিলেই বাড়িটি নবরূপে সাজানো হয়। শোনা যায়, স্ত্রী-অক্ষতার মনের মতো করেই বাড়িটি সাজিয়েছেন ঋষি।
লন্ডনের ওল্ড ব্রাম্পটন রোডে দক্ষিণ কেনসিংটনে আরও একটি বাড়ি রয়েছে এই দম্পত্তির। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এই বাড়িতে যান তারা। এ ছাড়াও নর্থ ইয়র্কশায়ারে ঋষির রয়েছে একটি খামারবাড়িও। ওই বাড়িটিও অত্যন্ত বিলাসবহুল।
ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে-জামাইকে ঘিরে বিতর্ক আছে আরও। যারা ব্রিটেনের বাইরের বাসিন্দা কিন্তু পেশাসূত্রে সে দেশে থাকছেন, তাদের সে দেশের সরকারকে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সেই করফাঁকির অভিযোগ উঠেছিল ঋষি-ঘরনি তথা ভারতের অন্যতম ধনী নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার বিরুদ্ধে।
যদিও সে সব অভিযোগ নস্যাৎ করে অক্ষতা জানিয়েছিলেন, তিনি সরকারি নিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলেন। নিয়ম মেনে করও দেন।
ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের বাসিন্দা ছিলেন ঋষি। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। মায়ের ছিল ওষুধের ব্যবসা। অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ঋষি ছিলেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার।
‘গোল্ডম্যান স্যাক্স’-এর মতো সংস্থায় কাজ করেছেন বিশ্লেষক হিসাবে। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঢোকার আগে অবশ্য সেই চাকরি ছাড়েন তিনি। এখন তো ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা ব্রিটেনের এই অন্যতম ধনী প্রধানমন্ত্রী ‘ঋষি’। সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।