লাইফস্টাইল ডেস্ক : এখন সময় পাল্টেছে। এর সঙ্গে পাল্টেছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন প্রণালি, পাল্লা দিয়ে কাজের চাপ এবং ইঁদুর দৌড়ে প্রথম হওয়ার প্রবণতা। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। তাই বয়স কম বলে নিশ্চিন্তে বসে থাকার অবকাশ নেই।
শুধু অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণেই নয়, বংশগত কারণেও শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য হতে পারে, এ অবস্থাকে ফ্যামিলিয়াল বা পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে। বাবা কিংবা মা থেকে এ জিন পেলে তাকে হেটারোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া এবং বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে এ জিন পেলে তাকে হোমোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে।
এদের অনেকের ছোটবেলায় হৃদরোগ এবং সেই সূত্রে হার্ট অ্যাটাক হয়। জন্মগত হৃদরোগ, রক্তনালির সংকোচন বা রক্তনালির রোগ, জিনগত ত্রুটি ইত্যাদি কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া অল্প বয়সে মুটিয়ে যাওয়া, রক্তে চর্বির আধিক্য, কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া, ধূমপানের অভ্যাস, মানসিক চাপ অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর খাবারে আসক্তি, কায়িক পরিশ্রম একেবারেই না করা, রাত জাগা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি তরুণ প্রজন্মের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
রোগের তীব্রতা
পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শরীরে কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগটির হেটারোজাইগাস ফর্মগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বা সম্ভাব্যতা প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে একজন। হোমোজাইগাস গোত্রগুলোর সম্ভাব্যতা অনেক কম। ১০ লাখে একজন। রোগের জিন বহনকারী নিকটতম আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক হলে হোমোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া দেখা দেয়।
অসুখটি সাধারণত একটি এলডিএল রিসেপ্টর জিন প্রত্যেক পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের কোলেস্টেরলের আধিক্যের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধের প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
শরীরে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের স্বাভাবিক মাত্রা টোটাল কোলেস্টেরল বলতে সাধারণত এইচডিএল, এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের ০.২ গুণের সমষ্টিকে বোঝায়, অর্থাৎ টোটাল কোলেস্টেরল= এইচডিএল+এলডিএল+০.২ ট্রাইগ্লিসারাইড। টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা ৬.২ মিলি মোল বা লিটারের নিচে হওয়া ভালো। হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। অনেকেই বাল্যকাল থেকেই ধূমপান করে আসছে।
এখন যেসব রোগী এই রোগে আক্রান্ত তাদের অধিকাংশই অল্প বয়সী। আগে চল্লিশোর্ধ্ব কিংবা ৫০ বছরের বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন ২০ থেকে ৩০ বছরের যুবককেও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই ধূমপান করেন। এজন্য যাদের রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি, যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস আছে, অর্থাৎ যাদের বাবা-মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, হার্টে রিং ও বাইপাস পরানো তাদের সন্তানদের সব সময় চেকআপের মধ্যে থাকা দরকার। তাদের কোলেস্টেরল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কিনা, তা নিয়মিত চেক করতে হবে।
রোগের লক্ষণ
ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়ার শিকার রোগীদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, উপরিউক্ত পরিমিতি প্রায়ই মেনে চলে না। স্ট্যাটিন জাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সত্ত্বেও পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়ার রোগীর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথার (অ্যানজাইনা) পাশাপাশি ত্বকে এবং জেনথোমা বা হলুদ রঙের নরম চর্বির পাহাড় দেখা যায়। এমনকি টিনএজারদেরও একাধিক করোনারি বা হার্টের ধমনি ব্লকের কারণে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়।
রোগ প্রতিরোধ
ফলমূল, শাকসবজি, মাছ এবং কম চর্বিযুক্ত অথবা চর্বিমুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে
শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
ব্যায়াম-নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। তাই নিয়মিত ১৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। মর্নিং ওয়াকও করতে পারেন।
তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন– জাঙ্ক ফুডে প্রচুর পরিমাণে তেল থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে তেলে ভাজা জিনিস খাবেন না।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন– মোটা ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
[অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউট ও হাসপাতাল]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।