বিনোদন ডেস্ক: সকালে উঠে খবরটা পেলাম। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি। তাই বার বার জিজ্ঞেস করছিলাম খবরটা সত্যি কি না। মনে হয়েছিল, যে খবরটা সত্যি নয়। কারণ, এরকম একটা খবর সত্যি হওয়াও ঠিক নয়। পরপর এত দুঃখের খবর, কী যে বলব ঠিক বুঝতে পারছি না।- এমটাই বলছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা।
(কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল ঋতুপর্ণার) অভিষেক চ্যাটার্জি আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা অভিনেতা। বাংলা ছবিতে ওঁর অনেক অবদান। এবং আমি চাই, আমাদের দর্শক যেন ওঁকে খুবই সম্মানের সঙ্গে মনে রাখেন। অনেক শুভকামনা যাতে দেন, যাতে যেখানেই থাকুন না কেন, ভাল থাকেন। শান্তিতে থাকেন।
একসময় এত ছবি করেছি ওঁর সঙ্গে। সেই সংখ্যার হিসেব নেই আমার কাছে। অনেক ছবি, অনেক ছবি! এটুকু বলতে পারি, আমার জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ ছবি ওঁর সঙ্গে করা। যেখান থেকে কর্মাশিয়াল সিনেমার হিটকে উপলব্ধি করলাম, গোল্ডেন জুবিলি, সিলভার জুবিলি… তার নিশ্চয়ই একটা বড় পার্ট অভিষেক চ্যাটার্জি।
আমার এখনও মনে আছে… আমি শুনেছিলাম, ঋতুপর্ণা সুপার স্টার হয়ে গিয়েছে, সুজন-সখী গ্রামেগঞ্জে, শহরে, শহরতলিতে, চারিদিকে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেই ছবি কত টাকার ব্যবসা করেছে, এখন ঠিক মনে নেই… তবে আমাদের প্রযোজক অসীম সরকার এসে বলেছিলেন… ‘তুমি আমার লক্ষ্মী’। অভিষেককে বাহবা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে একটা বিরাট উপহার দিলে’। ‘সুজন সখী’ আমার কেরিয়ারের প্রথমদিকের ছবি। ‘শ্বেতপাথর’-এর থালার পর। এবং সেটা দারুণ হিট হয়েছিল। স্বপন সাহা পরিচালক ছিলেন। ‘সব সখীরে পার করিতে…’ এই গানটা আজও সকলের মুখে মুখে শোনা যায়। আমি বোধহয় মঞ্চে উঠলে প্রথমে ওই গানটাই গাই।
অভিষেক চ্যাটার্জি সেই ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। আমার যে ছবি জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহন’, যাতে আমি জাতীয় পুরস্কার পাই… সেই ছবিরও কিন্তু একটা বিশাল বড় অংশ জুড়ে অভিষেক চ্যাটার্জি রয়েছেন। আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সেখানে। সেই ছবিতে অভিনয় করতে-করতে ‘মিঠু’ আমার পরিচালক ঋতুপর্ণা ঘোষকে অনেক ভাল ভাল বলেছিলেন আমার সম্পর্কে।
অনেক কাজের মধ্যে একজন সরল মানুষকে আমরা দেখেছি। অন্যের উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সেটে মজা করতেন। খুব ভাল রান্না করতেন, খাবার নিয়ে আসতেন রান্না করে। পরবর্তীকালে যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। যখনই আমি টেলিভিশনে একঝলক দেখতাম, মনে হত এত সুন্দর চেহারা ছিল, কেন নিজেকে আরও মেনটেন করে না। মনে হয়েছিল, ওঁ কি অসুস্থ? শরীরটা কি ভাল নেই? কিন্তু যোগাযোগ হয়নি অনেকদিন। বহুদিন। তবে আজ ওঁর চলে যাওয়া আমাদের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। এরকমভাবেই সকলে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যেদিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, যেদিন বাংলা সিনেমা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল – যে বাংলা সিনেমা কি আর হবে? সেই সময় কিন্তু কিছু মুখ ছিলেন, যাঁরা এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ধরে রেখেছিল। যেমন অভিষেক চ্যাটার্জি। আমার অনেক আগে থেকে কাজ করছেন।
আমি মনে করি, যে আমাদের একটা সুন্দর গ্রুপ ছিল। সুন্দর আবহাওয়া ছিল। আমরা সকলে খুব আনন্দ করে কাজ করতাম। আউটডোরে আনন্দ হত। আমার কাছে অভিষেকের চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের। হয়তো ওঁর মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল। সেগুলো হয়তো জানি না, কতটা ছিল, কী ছিল… সেগুলো নিয়ে কতটা আপেক্ষ ছিল… তবে আজকে সে যে চলে গিয়েছে, যেখানে গিয়েছে, সেখানে হয়তো অনেক শান্তি পাবে। আমি চাইব, যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক।
সূত্র: tv9bangla
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।