জুমবাংলা ডেস্ক : পটুয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়হীনতায় সড়ক খুঁড়ে সড়কের মালামাল তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একই সড়কে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটির কাজ এবং এলজিইডি সড়ক পাকাকরণের কাজ করলেও কারও মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তবে প্রতি মাসে সরকারের উন্নয়ন সংস্থাগুলো নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা হলে এ ধরনের অর্থ অপচয় কিংবা সরকারি সম্পদ নষ্ট হতো বলে মত স্থানীয়দের।
সম্প্রতি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধনখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা মিলে সড়কের কার্পেটিং খুঁড়ে ইট, খোয়া, বালি নিয়ে যাচ্ছেন। যে যার মতো পারছে সড়ক থেকে খোয়া এবং কার্পেটিংয়ের স্তর তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কারও হাতে গামলা কিংবা কারও মাথায় বস্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পায়রা নদী পাড়ের এই গ্রামকে বন্যার হাত থেকে রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণ করা বেড়িবাঁধের ওপর বেশ কয়েক বছর আগে কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। তবে সম্প্রতি সেই পাকা সড়কের ওপর মাটি ফেলে বাঁধ উঁচু করার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আপদকালীন তহবিলের ২১ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় করে ২৫০ মিটার এলাকায় বাঁধের ওপর ১.২ মিটার মাটি ফেলে উঁচু করার কথা রয়েছে। এমন খবরেই যে যার মতো রাস্তা খুঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু রাস্তার ওপর মাটি পড়বে, সেহেতু মাটির নিচে ইট, খোয়া দিয়ে লাভ কী। এজন্য তারা সড়কের মালামাল তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা চুন্নু খান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন যখন আসছে তখন আমরা বলেছিলাম রাস্তার বাইরের পাশ দিয়ে আপনারা উঁচু কইরা দেন। এতে কইরা আমাদের পাকা রাস্তাও থাকবে, আর পানিও ঢোকতে পারবে না। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন এই পাকা রাস্তার ওপর মাডি দেতে আছে। হেই লগ্যা সবাই ইট, খোয়া বালি লইয়া গেছে। এহন তো আমাদের কপালে আর পাকা রাস্তা জোডবে না। এই মাডির রাস্তা দিয়া চলা চলতি করতে হইবে।’
একই এলাকার বাসিন্দা মনির সিকদার বলেন, ‘এখন তো আমাদের ভোগান্তির কোনো শ্যাষ থাকবে না। এহানে একটা প্রাইমারি স্কুল আছে। ছোট ছোট পোলাপান এই মাডি-কাদার রাস্তা দিয়া কেমনে আশা যাওয়া করবে? সব দেশে কাঁচা রাস্তা পাকা হয়, আর মোগো গ্রামে পাকা রাস্তা কাঁচা হইলো।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই দপ্তরের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ তৈরি করার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ বাঁধের ওপর পাকা সড়ক নির্মাণ করে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে বাঁধ উঁচু করার উদ্যোগ নিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই কাজ শুরু করে।
এ বিষয় জানতে চাইলে এলজিইডির পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন আলী মীর বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর জনস্বার্থে পাকা রাস্তা করি। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি বাঁধটি উঁচু করার আগে আমাদের মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে অবহিত করতো, তাহলে আমরা সড়কে যেসব মালামাল ছিল তা এক স্থানে সরিয়ে রাখতাম। পরে বাঁধ উঁচু করার কাজ শেষ হলে বাঁধের ওপর খোয়া-বালিসহ অন্য মালামাল ফেলে রোলার দিয়ে সমান করলে মানুষ চলাচল করতে পারতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের অবহিত করেনি’
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় এই এলাকার বাঁধের ওপর থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে কারণে আপদকালীন কাজ হিসেবে আমরা বাঁধ উঁচু করছি। এছাড়া আমরা বাঁধ তৈরি করলেও এলজিইড কর্তৃপক্ষ যখন বাঁধের ওপর কোনো পাকা সড়ক তৈরি করে তারা আমাদের কাছ থেকে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নেয়নি। তবে ভবিষ্যতে আমরা এ সম্পর্কে সচেতন থাকবো।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।