নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় মোবাইল অপারেটরদের বিদেশি মালিকানা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশে সীমিত করা হয়েছে। ফলে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন বাংলালিংককে ১৫ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ বিদেশি মালিকানাধীন রবিকে ৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এ শেয়ার দেশীয় উদ্যোক্তা কিংবা শেয়ারবাজারে বিক্রি করতে হবে।
সরকার সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদনের পর ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ নামে নতুন নীতিমালা কার্যকর হয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগের ওপর স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটরে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি শেয়ার রাখা যাবে, টাওয়ার ও ফাইবার অবকাঠামো কোম্পানিতে ৬৫ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ সেবায় বিদেশি বিনিয়োগ সীমা থাকবে ৪৯ শতাংশ।
বর্তমানে গ্রামীণফোনে নরওয়ের টেলিনর মালিকানায় রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ার, বাকি অংশ দেশীয় উদ্যোক্তা ও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের হাতে। রবির ৯০ শতাংশ শেয়ার মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপের হাতে, আর ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পুঁজিবাজারে। বাংলালিংকের শতভাগ মালিকানা দুবাইভিত্তিক ভিওনের কাছে।
রবির প্রধান করপোরেট ও রেগুলেটরি কর্মকর্তা শাহেদ আলম মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন কেবল নীতিমালা হয়েছে। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’ বাংলালিংক অবশ্য এর আগেই জানিয়েছে, বাধ্যতামূলক মালিকানা শর্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।
নতুন নীতিমালায় টেলিযোগাযোগ খাতের দীর্ঘদিনের জটিল লাইসেন্স ব্যবস্থা ভেঙে চারটি বড় ক্যাটাগরি করা হয়েছে—অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার, ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার এবং নন-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার। এছাড়া টেলিকম-এনাবলড সার্ভিস প্রোভাইডার নামে আলাদা তালিকাভুক্তি চালু হচ্ছে।
সরকারের দাবি, ২০১০ সালের আইএলডিটিএস নীতি সময়ের সঙ্গে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। একাধিক স্তরের লাইসেন্স জটিলতা, অবকাঠামো ভাগাভাগির অভাব, অব্যবহৃত ফাইবার নেটওয়ার্ক, দুর্বল কভারেজ এবং নিম্নমানের সেবা খাতের অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন নীতিমালায় এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ভয়েস ও ডেটা সেবা নিশ্চিত করা হবে।
ভোক্তাদের জন্য সুবিধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করা, তিন বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ টাওয়ারকে ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে দেশীয় উদ্যোক্তারা নীতিমালার বিরোধিতা করেছেন। তাদের অভিযোগ, ছোট ও মাঝারি কোম্পানিকে বঞ্চিত করে বড় বিদেশি অপারেটরের জন্য পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে জাতীয় স্বার্থ ও ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অন্যদিকে সরকারের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলছেন, নতুন নীতি প্রতিযোগিতা বাড়াবে, একক নিয়ন্ত্রণ ভাঙবে এবং সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। তার দাবি, এতে গ্রাহকরা কম খরচে উন্নত সেবা পাবেন, আবার দেশীয় উদ্যোক্তাদেরও উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হবে।
নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য তিন ধাপের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে সব অপারেটরকে বাধ্যতামূলকভাবে নতুন কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে।
সূত্র: সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।