জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমানে ভরা মৌসুমেও রড ও সিমেন্টের বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এতে অবকাঠামো নির্মাণ সামগ্রীর বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি মেগা প্রকল্পের কাজ স্থগিত থাকা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের মাসগুলোর তুলনায় বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, ফলে বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি প্রকল্প পুনরায় শুরু না হলে বাজার স্বাভাবিক হবে না।
Table of Contents
ব্যবসায়ীদের অভিমত
ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রড ও সিমেন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। পাইকারি ও খুচরা বিক্রি আশানুরূপ নয়। অন্যান্য বছর এই সময়ে ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু এবার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকায় বাজারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
রড ও সিমেন্টের দাম হ্রাস
গত মে-জুন মাসে রডের দাম প্রতি টন ৯০ হাজার টাকার ওপরে ছিল। তবে জুলাই-আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তা কমে ৮৩-৮৫ হাজার টাকায় নেমে আসে। অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে এই দাম আরও কমে প্রতি টন ৭৬-৭৮ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, সিমেন্টের দামও কমেছে। বর্তমানে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম ৪৫০-৫২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় দাম স্থিতিশীল থাকছে।
বাজার মন্দার কারণ
বাজারে স্থবিরতা ও মন্দার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট এবং আমদানি ব্যাহত হওয়ার ফলে রড ও সিমেন্টের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরলেও সরকারি প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত থাকায় বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না।
রড ও সিমেন্ট শিল্পের অবস্থা
দেশের ইস্পাত খাতে বাজারের আকার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি ১০ লাখ টন হলেও বার্ষিক চাহিদা ৭৫ লাখ টন। সিমেন্ট শিল্পেও প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে এবং বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৮ কোটি টন হলেও চাহিদা রয়েছে মাত্র ৪ কোটি টন।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মতামত
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ থাকায় রড ও সিমেন্টের বাজারে স্থবিরতা দেখা দেয়। ষোলশহরের মেসার্স এবি চৌধুরীর স্বত্বাধিকারী অঞ্জন বড়ুয়া বাবু বলেন, ‘গত চার মাসে প্রতিদিন ১০-১৫ টন রড ও ২,৫০০-৩,০০০ ব্যাগ সিমেন্ট বিক্রি করেছি। অথচ আগের বছর ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন ১০০ টন রড ও ১,০০০ ব্যাগ সিমেন্ট বিক্রি হয়েছিল।’
নাবিলা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নুরুন নবী জানান, ‘রড ও সিমেন্টের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। ব্যবসা চাঙা হওয়ার আশায় প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হচ্ছে না।’
বাজার পুনরুদ্ধারে করণীয়
বিএসএমএ’র (বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইস্পাত খাতের বর্তমান বাজার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত থাকায় রড ও সিমেন্ট খাত চাপে পড়েছে। নিউ নজরুল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ থাকায় বেসরকারি আবাসন খাতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, ফলে বিক্রিতে ধস নেমেছে।’
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্মাণ খাতে রড ও সিমেন্টের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি প্রকল্পগুলো পুনরায় শুরু হলে বাজার স্থিতিশীল হবে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজ আরও বৃদ্ধি পাবে, ফলে রড ও সিমেন্টের চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে সরকারি প্রকল্পগুলোর অনিশ্চয়তা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে এই খাতের স্থিতিশীলতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।