বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : স্মার্টফোনের এ যুগে সময়ের হিসাব রাখার জন্য আলাদা করে ঘড়ির প্রয়োজন হয় না। তবে আভিজাত্য, শখ এবং ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে এখনও ঘড়ির ব্যবহার হয়ে থাকে। মাত্র ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ঘড়িও রয়েছে। আর যদি বলা হয় দামি ঘড়ির কথা, তবে সবার প্রথমেই আসবে রোলেক্সের নাম।
প্রায় শত বছর আগের কথা, হ্যান্স উইলসডর্ফ নামে এক এতিম ছেলে তার সম্পত্তি হারিয়ে নিজ শহর ছেড়ে চলে যান অন্য শহরে। এর কিছু বছর পর তিনি শুরু করেন নিজের পছন্দের কাজ ঘড়ি বানানো। একটা সময় তা প্রতিষ্ঠানের রূপ নিলে, তিনি এর নাম দেন ‘রোলেক্স’। আর এই রোলেক্সই বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম, যার ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার! এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে, এমন কী আছে যার কারণে রোলেক্সের দাম এত বেশি?
কারণটা রয়েছে রোলেক্সের নির্মাণশৈলীর জন্য। এ ঘড়িতে 904L গ্রেডের স্টিল ব্যবহার করা হয়। যা বাজারের প্রচলিত ক্যাসিও, সিটিজেন ব্র্যান্ডের ঘড়িতে ব্যবহার করা 316L গ্রেডের চেয়েও অনেক বেশি টেকসই। এছাড়াও এই স্টিলের কারণে ঘড়িটি হাতে পরলে বেশ আরামবোধ হয়। রোলেক্সের ঘড়িতে নিজস্ব মেটাল ফাউন্ড্রিতে প্রসেস করা স্বর্ণ, প্ল্যাটিনাম ব্যবহার করা হয়। তবে রোলেক্সের কিছু ঘড়ি রয়েছে যা তৈরি হয় পুরোপুরি স্বর্ণ দিয়ে। যদিও সেগুলোর বেশিরভাগই ধনী ব্যক্তিদের প্রি-অর্ডার করা।
এদিকে, রোলেক্স তার ঘড়িগুলোর বেজেল তৈরি করে উচ্চমান সম্পন্ন সিরামিক ‘সেরাক্রম’ (Cerachrom) দিয়ে। এর প্রতিটি ডায়াল ও কাটা তৈরি করা হয় একদল দক্ষ শিল্পীর দ্বারা। এছাড়া শেষের ‘ফিনিশিং টাচ’ রোলেক্স খুবই যত্নের সঙ্গে করে থাকে। প্রত্যেকটি ঘড়িকে খুবই যত্নের সঙ্গে মসৃণ করা হয়। অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ড যেখানে রোবটের সাহায্যে ঘড়ির যন্ত্রাংশ একত্রীকরণ করে থাকে, সেখানে রোলেক্স সম্পূর্ণ হাতের ছোঁয়ায় এই কাজটি সম্পন্ন করে থাকে।
প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তত করা রোলেক্সের এক একটি ঘড়ির গুণগত মান খুবই সতর্কতার সঙ্গে নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া তাদের ঘড়িগুলোর জলনিরোধক ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, সেটি দেখার জন্য আদর্শ মানের চেয়েও ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি চাপে এগুলোকে পরীক্ষা করা হয়। আর এভাবেই টেস্টে ৯৯.৯৯ শতাংশ ঘড়িই কোনও ত্রুটি ছাড়া ছাড়পত্র পেয়ে যায়।
২০১৭ সালে রোলেক্সের সবচেয়ে দামি ঘড়ি ‘পল নিউম্যান’স ডেটোনা'(Paul Newman’s Rolex Daytona) বিক্রি হয়েছিল ১৭.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বর্তমানে রোলেক্সের সবচেয়ে সস্তা ঘড়িটি হচ্ছে ‘ওয়েস্টার পারপেচুয়াল’, যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা!
রোলেক্স তাদের ঘড়ি তৈরির প্রায় সমস্ত সরঞ্জামই নিজেরা তৈরি করে থাকে। যা কিনা অন্য ব্র্যান্ডদের থেকে রোলেক্সকে আলাদা করে তুলেছে। এছাড়াও ‘রোলেক্সে’র গবেষক দল অনেক সমৃদ্ধ। যে কারণে বর্তমানে স্মার্ট-ওয়াচের যুগেও ‘রোলেক্স’ তাদের হাতঘড়ির ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।