স্পোর্টস ডেস্ক : এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রত্যাশা অনুযায়ী নিশানা ভেদ করতে পারছিলেন না আরচার রোমান সানা। ফর্মের সঙ্গে লড়াই করা রোমান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিকের হাত ধরে ফিরে আসার সব চেষ্টায়ই করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নানা কারণে কিছুটা হতাশা এবং অভিমানও জন্মেছিল তাঁর মনে। মনের ভেতর থাকা কষ্টটা আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি।
রবিবার আরচারির জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আরচারিকে পরিচিত করা রোমান। তাঁর এ সিদ্ধান্তটি ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত হয়ে ওঠে। বারবার যোগাযোগ করেও রোমানকে পাওয়া না গেলেও গতকাল সমকালকে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তীর-ধনুক তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আরচারি খেলে মাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা বেতনে নিজের হাতখরচ চালানোই অসম্ভব। সে কারণে ৩ হাজার টাকার ভাতা ছেড়ে ব্যবসায় নামছেন রোমান। খুলনায় তাঁর বাবার পুরোনো মাছের ঘের বড় আকারে শুরু করবেন বলে জানিয়েছে ঘনিষ্ঠ সূত্রটি।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত বছরই টঙ্গীর শহীদ আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন রোমান। খেলেছিলেন চীনের হ্যাংঝুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসেও। এর পর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। গত ২০-২৫ ফেব্রুয়ারি ইরাকে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ আরচারির স্টেজ ওয়ানে শুরুর দিকে যে তালিকা করা হয়েছিল, সেখানে ছিল রোমানের নাম। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে রোমান এবং রামকৃষ্ণ সাহাকে বাদ দেওয়া হয়। তখনই ক্যাম্প ছেড়ে গাজীপুর আনসার একাডেমিতে চলে যান এ তীরন্দাজ।
এক মাসের মধ্যেই জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন বরাবর চিঠিও দেন রোমান। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল, ‘অবসরের কারণ হিসেবে রোমান উল্লেখ করেছে ‘ব্যক্তিগত’। আমরা তাকে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছিলাম; কিন্তু সে রাজি হয়নি। রোমান এখন চায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সম্ভাবনাময় ইভেন্টের মধ্যে অন্যতম আরচারি। আর তীর-ধনুকের এই খেলাটা বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল রোমানের হাত ধরেই। কিন্তু মুখে যতটা সুযোগ-সুবিধার কথা বলে আসছেন ফেডারেশনের কর্তারা, বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও নেই। ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট খুব একটা পান না আরচাররা। জাতীয় দলে খেলা আরচাররা পান মাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা। আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেললে ফেডারেশন থেকে কোনো অর্থ দেওয়া হয় না।
অথচ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেললে অর্থ পাওয়া যায়। তাই তো রোমান এখন শুধু ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় মনোযোগ দিতে চান। ক্যাম্পের খাবারের মানও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। কোনোরকম জীবন পার করার চেয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যই রোমান ব্যবসায় নামছেন বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি। গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর রোমান সানাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ, যিনি কিনা নিজ যোগ্যতায় অলিম্পিক খেলার টিকিট পেয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।