ধর্ম ডেস্ক : বাড়ির পাশে নদী। নদীর নাম ধানসিঁড়ি। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল অজগর সাপ এঁকেবেঁকে চলছে। মাতৃভূমি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে অজস্র নদী শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে রয়েছে। তবে এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই। বেশির ভাগ নদীই যৌবন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আর কত নদী যে মরে গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো করা হয়নি। নদী মরে যায় কেন? নদী যখন তার ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয় তখনই নদী মরে যায়। নদীর ধর্ম কী? নদীর ধর্ম নিরবধি বয়ে চলা। নদী যখন থেমে যায়, বলা ভালো মানুষ যখন নদীকে গলা টিপে, পায়ে শিকল পরিয়ে থামিয়ে দেয়, তখনই ধীরে ধীরে নদী মরে যায়। প্রথমে খাল, তারপর ঝিল, সবশেষে দুর্গন্ধযুক্ত বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে ইতিহাসের বুক থেকে হারিয়ে যায় একসময়ের খরস্রোতা নদী। তবে সঠিক সময়ে যদি পথ খুলে দেওয়া যেত, খনন করে নদীর বয়ে চলা নিশ্চিত করা যেত তাহলে নদীটি থাকত স্বচ্ছ, প্রবহমান।
মানুষের জীবনও অনেকটা নদীর মতো। জন্মের পর থেকে প্রভুর দিকে তার বয়ে চলা শুরু হয়। মাঝে গুনাহের বড় বড় দেয়াল এসে পথ আটকে দেয়। মানুষ তখন মসজিদে যেতে চায়। কিন্তু কী এক অদৃশ্য কারণে পারে না। মানুষ চায় ভালো হতে। মনের গভীর থেকে প্রতিদিনই সংকল্প করে আগামীকাল থেকে ভালো হয়ে যাব। কিন্তু সে ভালো হতে পারে না। পারবে কীভাবে? তার সামনে যে গুনাহের দেয়াল। বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমতের সীমা নেই। বান্দার জীবন থেকে গুনাহের দেয়াল ভেঙে দিতে এক মাসের সিয়াম-সাধনার বিশেষ আয়োজন করেছেন। এ সময় আল্লাহ শয়তানকে আটকে রাখেন। বান্দার জন্য পরিবেশ তাকওয়ার অনুকূলে রাখেন। চারদিকেই কোরআন আর ধর্মের সুবাতাস ছড়িয়ে দেন। বান্দার মন নরম করে দেন। যাদের ভাগ্য ভালো তারা এ সুযোগ লুফে নেয়। নিজেকে রাঙিয়ে নেয় তাকওয়ার রঙে। আর যারা হতাভাগা, কপালপোড়া তারা রয়ে যায় আগের গান্দেগির জীবনে।
প্রিয় পাঠক! বছর ঘুরে আবার আসছে রমজান। দিলের নদীতে যত ময়লা আছে সব সাফ করার মাস এ রমজান। হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, রসুল (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। আমাদের মধ্যে এখনো এমন অনেক আল্লাহর বান্দা আছেন, যারা রমজানের জন্য বিশেষ করে প্রস্তুতি নেন। তবে আমরা যারা এখনো রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারিনি তাদের এখনই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরি। রমজানের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির সঙ্গে আত্মিক প্রস্তুতিও নিতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি পর্ব না নিলেও সমস্যা হবে না, যদি নফসের প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
অন্যায়, অবিচার, সুদ-ঘুষ, মিথ্যা থেকে নিজের আত্মাকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। হ্যাঁ! আমরা এত দিন পাপের সাগরে ডুবে ছিলাম ঠিক। কিন্তু সময় এসেছে ফিরে যাওয়ার। তাওবাতুন নাসুহা করার। রমজান উপলক্ষে আমাদের সব ধরনের অন্যায় অবিচার থেকে তওবা করে খাঁটি জিন্দেগি শুরু করতে হবে। আর এ জন্য এখন থেকেই মানসিক এবং বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
হতে পারে এ রমজানই আমার জীবনের শেষ রমজান। এ বছরের পর আর কোনো রমজান আমি পাব না। তাই এ রমজানকেই আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। একটি হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) আমিন বলে মিম্বারে পা রাখেন। সাহাবিরা এ রকম দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি কেন এমনটি করলেন? রসুল (সা.) বললেন, এই মাত্র জিবরাইল (আ.) বলল, যে রমজান মাস পেয়েও গুনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে পারল না, নিজের আত্মশুদ্ধি করতে পারল না, নিজেকে জান্নাত উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারল না, তার জন্য ধ্বংস। জিবরাইলের এ দোয়াকে যৌক্তিক মনে করে আমি আমিন বললাম। (আদাবুল মুফরাদ।)
শিক্ষার্থীদের নতুন দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে, সপ্তাহ শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
ইমাম (বায়হাকি রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ‘একবার শাবানের শেষ দিন রসুল (সা.) আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন। খুব দরদি ভাষায় তিনি বললেন, হে মানুষ! তোমাদের মাঝে একটি সম্মানিত মাস এসেছে। এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে দিনে রোজা পালন করা ফরজ এবং রাতে কিয়াম করা নফল। এ মাসে একটি নফল ইবাদত ফরজের সমান এবং একটি ফরজ ইবাদত সত্তরটি ফরজের সমান বিবেচনা করা হয়। এ মাসের প্রথম দিকে রহমত, মধ্যভাগে ক্ষমা এবং শেষ দিকে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (বায়হাকি শরিফ।) হে আল্লাহ! মাহে রমজানের পূর্ণ বরকত লাভের তাওফিক আপনি আমাদের দিন। আমিন।
লেখক : মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।