ধর্ম ডেস্ক : সারা দিনের রোজা শেষে রোজা সমাপ্ত করার জন্য যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করেন তা-ই ইফতার। ইফতার এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ও পুণ্যময় ইবাদত। ইফতার আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যও। সময়ের পরিবর্তনে খাবারের রকমের পরিবর্তন এলেও ইফতার করা, করানোর সংস্কৃতি এ ভূখণ্ডে চলমান প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে।
এ দেশে রমজান মাসজুড়ে বাজারে বাজারে, শহর-গ্রামে বসে নানা পদের ইফতারির দোকান। মসজিদের মিনার বা মাইক থেকে যখন মাগরিবের আজান বা ইফতারের সাইরেন বাজানো হয় তখন যেদিকে চোখ যায় শুধু ইফতারের দৃশ্যই চোখে আসে। পুরো দেশ যেন পরিণত হয় এক বৃহদাকারের ইফতার মাহফিলে। ইফতারের ঘোষণার সময় রাস্তায় পথচারীদের ইফতার গ্রহণের অনুরোধ করতে থাকেন অনেকে। সামর্থ্য অনুযায়ী মহিলারা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দিয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ইফতারি পাঠান।
ইফতার বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের অনস্বীকার্য অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলিম রাষ্ট্রদূতদের সম্মানে অমুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও ইফতারের আয়োজন করেন। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মতো নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রমজান উপলক্ষে মুসলিম শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো হয়, তাদের জন্য ইফতারের আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইফতারের মজবুত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানের কথা জানান দেয়।
ইফতারের মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতি মজবুত হয় এবং একাত্মতা, উদারতা ও সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে বলে ইফতারকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০২৩ সালে ইফতারকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইফতারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ইফতার রোজাদারের জন্য পরম আনন্দের।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ তিরমিজি।
ইফতারের সময় রোজাদারদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ ইবনে মাজাহ।
ইফতারকে রসুলুল্লাহ (সা.) কল্যাণের মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করেছেন, ‘যত দিন লোকেরা (সূর্যাস্তের পর) দ্রুত ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ সহিহ মুসলিম।
ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া কবুল করে নেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোজাদারের দোয়া, যতক্ষণ না সে ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া (জামে তিরমিজি)।’
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে (আবু দাউদ)।’
ইফতার করা যেমন সওয়াবের কাজ তেমনি রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এতে ওই রোজাদারের সওয়াব না কমিয়েই ইফতার প্রদানকারীকে রোজাদারের সমান সওয়াব দেওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের প্রতিদান সমান প্রতিদান দেওয়া হবে এবং রোজাদারের প্রতিদান থেকেও কোনো প্রতিদান কমানো হবে না (তিরমিজি)।’
লেখক : যুবায়ের আহমাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।