স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ নির্মাণের জন্য পর্তুগালের বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন—এমন তথ্য উল্লেখ করে ফেসবুক ও টিকটকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লোগো সংবলিত ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ছবি এবং তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া টুইটের স্ক্রিনশটও দেখা যায়।
ফটোকার্ডটি ব্যবহার করে টিকটকে মুহাম্মদ তারিফুল ইসলাম তামিম (Md TARIFUL Islam Tamim) নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি পোস্ট করা একটি শর্ট ভিডিও আজ শনিবার (২ মার্চ) রাত ৮টা পর্যন্ত ৫১ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে শতাধিকবার।
আসন্ন রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রোনালদো?
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভেরিফায়েড ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স অ্যাকাউন্ট খুঁজে আসন্ন রমজান উপলক্ষে তাঁর কোনো শুভেচ্ছা বার্তা পাওয়া যায়নি। পরে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ফেসবুকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল২৪–এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত বছরের ২৩ মার্চ পোস্ট করা একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়।
এই সূত্রে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এক্স অ্যাকাউন্ট খুঁজে একই দিনে রোনালদোর টুইটটি পাওয়া যায়। অর্থাৎ পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আসন্ন রমজান উপলক্ষে এখনো কোনো শুভেচ্ছা বার্তা দেননি। ফেসবুক ও টিকটকে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ড এবং টুইটটি ২০২৩ সালের।
ভারতের অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণে ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছেন রোনালদো?
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি–ওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধানে কিছু ইউটিউব চ্যানেলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণে ৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার দাবি সম্পর্কিত ভিডিও পাওয়া যায়।
এর মধ্যে ‘Faishal786’ নামের একটি চ্যানেলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করা ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে বলা হয়, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অযোধ্যায় নির্মিতব্য মসজিদের জন্য ৪৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে ভিডিওটিতে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
‘এভ্রিথিং ভিডিওজ (Everythingvideos)’ নামের আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘CRISTIANO RONALDO DONATE MONEY FOR AYODHYA MOSQUE REAL NEWS OR FAKE’ শিরোনামে ৪৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ইউটিউব চ্যানেলটির লোকেশন দেওয়া আছে পাকিস্তান।
উর্দু ভাষায় পোস্ট করা ভিডিওটিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণে ৪৫ কোটি টাকা দেওয়ার দাবিটি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তবে এটি সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। কারণ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিভিন্ন সময় মুসলমানদের সহযোগিতা করেছেন। তবে রোনালদোর ভেরিফায়েড সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো খুঁজে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি–ওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধানে ভারতসহ আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদ মাধ্যমেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভারতের অযোধ্যায় মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ মসজিদ নামে মসজিদটি নির্মাণে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। আদালতের রায়ে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থলে রামমন্দির আর কিছু দূরে একটি স্থানে মুসলমানদের জন্য মসজিদ নির্মাণের কথা। রামমন্দির নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। মসজিদটির নাম ঠিক করা হয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর নামে।
মসজিদ নির্মাণের জন্য তৈরি ট্রাস্টটির নামে খোলা ফেসবুক পেজ ও এক্স অ্যাকাউন্টে রোনালদোর দান সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ভারতে মসজিদ নির্মাণে অর্থ দান করলে সেটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আগে প্রচার হওয়ার কথা। যেমন, ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফাতে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অনুদান নিয়ে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। এ থেকে জানা যায়, ওই সময় রোনালদো গাজার স্কুলগুলোর জন্য ২ হাজার ৪০০ ইউরো দান করেন।
রোনালদোর দান নিয়েও বিভিন্ন সময় ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য প্রচার হতে দেখা যায়। যেমন, বার্তা সংস্থা এপির সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে রমজান মাসে ফিলিস্তিনে রোনালদোর ১৫ লাখ ইউরো দান করার মিথ্যা দাবি প্রচার করা হয়। মূলত, ২০১৫ সালের ১৫ মে ‘9sportpro’ নামের একটি ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশের পরই তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে যে, রোনালদো নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রায় ৮০ লাখ ডলার দান করেছেন। তবে পরে সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, রোনালদো নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ তুলতে প্রচার চালালেও উল্লেখিত অর্থ দান করেনি।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ভারতে মসজিদ নির্মাণে অর্থ দান যদি করেই থাকতেন তাহলে সেটি মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে নিশ্চয়ই প্রচার পেত। সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো সূত্র ছাড়াই এ সম্পর্কিত ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।