জুমবাংলা ডেস্ক : কৃষি বিভাগের সহযোগিতা আর নিজের আত্মবিশ্বাসে উচ্চ মূল্যের সবজি ও ফল আবাদ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বাবুল দালাল। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের সফল কৃষক বাবুল দালালের সাফল্য গাঁথা।
৯ বছর পূর্বে চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে বেকার হয়ে পড়ে বাবুল। সে কঠিন সময়ে পরিচয় হয় ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ হাসিবের সাথে।
পরে মামুন তাকে নিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তৎকালীন কৃষি অফিসার শাহ্ মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেনের সামনে নিয়ে আসেন। কৃষি অফিসার ও মামুনের পরামর্শেই তখন কৃষি কাজে যোগ দেন বাবুল।
এরপরে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার কর্মগুণের জন্য বর্তমান কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলামও তার প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত।
২০১৫ সালে প্রথমে ১ বিঘা জমিতে উচ্চ মূল্যের গ্রীষ্ম কালীন টমেটো আর তরমুজ চাষ দিয়ে তার যাত্রা শুরু। ৯ বছরের ব্যবধানে বাবুল এখন তার জমির পরিধি বাড়িয়ে করেছেন ২৯ বিঘা। তার কৃষি খামারে রয়েছে থাইপেয়ারা, বারি মাল্টা, কার্টিমন আম, বারো মাসি আম, বলসুন্দরীকুল, ভারত সুন্দরী কুল, সিডলেস লেবু, সুগন্ধী লেবু।
সবজির মধ্যে রয়েছে, লাউ, বেগুন, সীম, বরবটি, টমেটো, পেঁপে, কলা আর এবার ব্যক্তি সহায়তায় উচ্চ মূল্যের রঙিন ফুলকপি, পাতা কপি, দেশী কপি, ব্রোকলি, লেটুসপাতা, ক্যাপসিক্যামসহ উচ্চমূল্যের বিদেশি জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল। তার মতে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে করা কপি ও ক্যাপসিক্যাম আয় করবেন ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।
চাষি বাবুল দালাল জানান, আমার কৃষি খামারে আবাদ করা সবটুকু জমিই লিজে (ভাড়ায়) নেওয়া। নিজের কোন জমি নাই। আল্লাহর রহমত, পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার গুণে প্রতি বছরই আমি কৃষি অফিসের সহায়তায় নতুন নতুন জাত আর উচ্চ মূল্যে সবজি ফসল আবাদ করে থাকি।
তারই অংশ হিসেবে ভেদরগঞ্জে আমিই প্রথম আবাদ করেছি থাই পেয়ারা, গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেরি তরমুজ, বারি মাল্টা, কার্টিমন আম, বারো মাসি আম, বলসুন্দরী কুল, সিডলেস লেবু, সুগন্ধী লেবু সবই প্রথম শুরু করেছি।
আর এবার কৃষি অফিসের স্যার ও মামুন ভাইয়ের ব্যক্তি সহায়তায় উচ্চ মূল্যের রঙিন ফুলকপি, রঙিন পাতা কপি, দেশি কপি, ব্রোকলি, লেটুসপাতা, ক্যাপসিক্যামসহ উচ্চমূল্যের বিদেশি জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করেছি।
আমি ছাড়াও তিনজন নিয়মিত শ্রমিকসহ প্রায় ২৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এ কৃষি খামারে। আমার সাফল্য গাঁথা ছড়িয়েছে দেশে বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে। তাতে আমার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। পাইনা ঋণ সহায়তা। নিজস্ব জমি না থাকায় উচ্চ হারে মহাজনি ঋণ নিতে হয়। ফসলের ক্ষতি হলে নিজেকেই মাশুল টানতে হয়। আমি কৃষি বিভাগসহ সকলে সহায়তা পেলে আল্লাহর রহমতে ভালো কিছু করার প্রত্যাশা রাখি ।
সবজি নিতে আশা এলাকাবাসী জসিম ঢালি জানান, বাবুল দালাল তার পরিশ্রম দিয়ে আমাদের এলাকায় নিত্য নতুন ফল ও সবজি আবাদ করে আমাদের তাক লাগিয়ে দেন। সে জৈব সার আর বিষমুক্ত ফসল আবাদ করায় আমরা জমি থেকে সবজি কিনে নেই। তার মতো পরিশ্রমী মানুষের জন্য আমরা দোয়া করি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ হাসিব বলেন, বাবুল দালাল একজন সম্ভাবনাময় কৃষক। আমরা তার জন্য গর্বিত। তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেয়া গেলে তিনি কৃষিতে আরো অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবেন। আমরা বা ব্যাংক তাকে সহায়তা করতে না পারার কারণ হচ্ছে তার নিজস্ব কোন জমি নেই।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, বাবুর দালাল অত্যন্ত পরিশ্রমী ও আন্তরিক কৃষক। তাকে দিয়ে আমরা এ বছর ব্যক্তি উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন কপি ও ক্যাপসিক্যাম চাষ করিয়েছি। তাতে তার ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আমি বিশ্বাস করি বাবুলের মতো কৃষক আমাদের জন্য গৌরবের। তাকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।