জুমবাংলা ডেস্ক : শীতের পিঠাপুলি তৈরিতে খেজুর রসের ব্যবহার বাঙালির আদি ঐতিহ্য। শীতে খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপক থাকলেও অধিক হারে খেজুর গাছ কাটা ও নতুন করে খেজুরের চারা রোপণ না করায় বাজারে এখন খেজুর রসের এক প্রকার সংকট চলছে। খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলীর কাছে এক সপ্তাহ বা তারও আগে বায়না না করলে পাওয়া যায় না খেজুর রস। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেড়েছে চোরের উৎপাত। তাই খেজুর রস চুরি ঠেকাতে এক গাছি রসের হাঁড়িতে শিকল লাগিয়ে দিয়েছেন তালা। গাছির এমন কাণ্ডে গ্রামজুড়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পৌরসভার মহিষকান্দি গ্রামের নূর ইসলাম সরদারের ছেলে হারুন অর রশিদ (৫০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণত মূল্যবান কোনো জিনিসপত্র চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে মানুষ তালা-শিকল ব্যবহার করে। কিন্তু মহিষকান্দি গ্রামের গাছি হারুন রসের হাড়ি বাঁচাতে তালা-শিকল ব্যবহার করায় বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে হাস্যরস ও মজার তর্কবিতর্ক চলছে। কারও প্রশ্ন, খেজুর রস সংগ্রহে ব্যবহৃত মাটির হাঁড়িতে তালা-শিকল হারুনের আগে কেউ ব্যবহার করেছে কি না তা নিয়ে। আবার কেউ বলছেন, রাতের অন্ধকারে গ্রামের দুষ্টু ছেলেরা খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামিয়ে রস খেয়ে হাঁড়ি ভেঙে ফেলে, আবার কখনো দূরে কোথাও ফেলে দেয়। যদিও গ্রামের দুষ্টু ছেলেদের এমন কাণ্ডকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখেন গ্রামবাসী। তবুও আবার কেউ কেউ বলছেন, দুষ্টু ছেলে নয় হারুন চোরের হাত থেকে রসের হাঁড়ি বাঁচাতে তালা-শিকল লাগিয়েছেন।
গ্রামবাসী জানায়, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন হারুন অর রশিদ। তিনি কখনো কাঁচা রস বাজারে বিক্রি করেন আবার কখনো রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ বছর তিনি ১৪০টি খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। লিজ হিসেব অনুযায়ী ৩ হাড়ি রসের এক হাঁড়ি রস গাছের মালিককে দিতে হয়। এ বছর প্রতিরাতেই গাছ থেকে হাঁড়িসহ রস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল চোর। বর্তমান বাজারে প্রতিটি মাটির হাঁড়ির দাম ১০০ টাকারও বেশি। চোরের হাত থেকে রসের হাঁড়ি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় বিভিন্ন গাছের কাঁটা দেওয়া, রাত জেগে পাহারা বসিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় হারুন সিদ্ধান্ত নেন লোহার শিকল দিয়ে হাঁড়ি বেঁধে তাতে তালা লাগাবেন তিনি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাজার থেকে তালা-শিকল কিনে গাছের সাথে জুড়ে দেন তিনি।
খলিল কাজী নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে গ্রামের ছোট শিশুরা রস নিয়ে খেয়ে ফেলত। এখন একটু বড় ছেলেরা গাছ থেকে রস নিয়ে খেয়ে ফেলে, হাঁড়ি ভেঙে দেয়। এসব কারণে হারুন আর্থিক ক্ষতি হয় বলে রসের হাঁড়িতে তালা-শিকল লাগিয়েছেন।
হিমেল আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি গ্রামে যেসব ছোট বাচ্চারা থাকে বা যুবক ছেলেরা আছে, তারা মজার ছলে, দুষ্টুমির ছলে খেজুর গাছ থেকে রস খেয়ে ফেলে বা চুরি করে নিয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এখন যা ঘটে তা হলো ছেলেদের এই দস্যিপনার বাইরেও একটা শ্রেণি আছে যারা রস চুরি করে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেয়। মূলত ছেলেদের দস্যিপনা ও চোরের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই হারুন খেজুর গাছের সাথে রসের হাঁড়িতে তালা-শিকল লাগিয়েছেন।
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী হারুন অর রশিদ সরদার বলেন, বাবার কাজ থেকে রস সংগ্রহ করা শিখেছি। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করেই আমি সংসার খরচ বহন করি। বাজারে রসের চাহিদা ভালো থাকায় প্রতি হাঁড়ি রস আমি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর চোরের উৎপাত বেশি বলে পাহারা বসিয়ে, গাছের গোড়ায় কাঁটা দিয়ে রাখলেও চোর রস নিয়ে যায়। এজন্য গাছের সঙ্গে রসের হাঁড়ি তালা-শিকল দিয়ে বেঁধে দিয়েছি। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করিয়ে বেশ ভালোই কাটছে আমার জীবন।
বিষয়টি নিয়ে গোসাইরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল আউয়াল সরদার বলেন, হারুন সম্পর্কে আমার ভাতিজা। তার রসের হাঁড়িতে তালা-শিকল দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মানুষ ব্যাপক হাস্যরস করছে। আমি প্রথমে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। প্রথমে নিজের হাসিও আটকাতে পারিনি। পরে হারুনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে সে আমাকে বলেছে চোরের হাত থেকে রসের হাঁড়ি বাঁচাতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।