রওশন জামিল: পর্দা কাঁপানো খল অভিনেত্রী

রওশন জামিল

বিনোদন ডেস্ক : দেশের সংস্কৃতির আঙিনায় উজ্জ্বল নক্ষত্র রওশন জামিল। সাবলীল অভিনয় ও নাচ দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য এক উচ্চতায়। গৌন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। অসামান্য প্রতিভার অধিকারিণী এই অভিনেত্রী ২০০২ সালের আজকের দিনে (১৪ মে) মৃত্যুবরণ করেন। তবে চলে গিয়েও তিনি দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি অংশ হয়ে আছেন। প্রয়াণ দিবসে গুণী অভিনেত্রীর প্রতি আরটিভি পরিবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রওশন জামিল

১৯৩১ সালের ৮ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। রওশন জামিল ঢাকার লক্ষীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস মিশনারী স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর পড়াশুনা করেন ইডেন কলেজে। শৈশব থেকেই তার নাচের প্রতি ঝোঁক ছিল। ম্যাট্রিক পাশ করার পর ভর্তি হন ঢাকার ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে ও নাচের তালিম নেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল এর কাছ থেকে।

রওশন জামিল

অভিনয় জীবনে রওশন জামিলের পদার্পণ হয় ১৯৬৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ প্রচার হয়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে। টেলিভিশনে অভিষেকের ২ বছর পর সিনেমায় কাজ শুরু করেন তিনি । ১৯৬৭ সালে তিনি অভিনয় করেন আরব্য রূপকথা ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’ সিনেমায়। এরপর ১৯৭০ সালে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি তাকে দারুণ সাফল্য এনে দেয়।

এরপর ধাপে ধাপে রওশন জামিল কাজ করতে থাকেন আমজাদ হোসেনের রচনা ও পরিচালনায় ‘নয়নমনি’, আবু ইসহাকের উপন্যাস অবলম্বনে শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ সিনেমাগুলোতে। এসব সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন।

রওশন জামিল তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘মাটির ঘর’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘নদের চাঁদ’, ‘বাঁধনহারা’, ‘দেবদাস’, ‘লাল কাজল’, ‘আশার আলো’, ‘দহন’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘লালসালু’।

ঢাকার ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে নাচ শেখার সময় প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গওহর জামিলের সাথে রওশন জামিলের সম্পর্ক হয়। ১৯৫২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে।

১৯৫৯ সালে নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল ও তিনি দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃত্য প্রশিক্ষন কেন্দ্র জাগো আর্ট সেন্টার। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই এই সংগঠনের দেখাশুনা করতেন।

কৃষ্ণচূড়া আর লাল শাড়িতে মোহনীয় রুনা

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে রওশন জামিল বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিলেন। এর মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া নৃত্যশিল্পে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৯৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।