ধর্ম ডেস্ক : শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাড়াকৃত ভবন/ফ্ল্যাট ভাড়াটিয়ার হাতে আমানত। এর যথাযথ ব্যবহার না করলে বা এক্ষেত্রে অবহেলা করলে সেটি খেয়ানত হবে। তাই বাড়ির সবকিছু যতœ সহকারে ব্যবহার করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে যেন ব্যবহারের ত্রটির কারণে কোনো জিনিস নষ্ট না হয়। অধিক ময়লা জমে ফ্লোর যেন নষ্ট না হয়।
এমনকি বাড়িওয়ালার অনুমতি ছাড়া দেয়ালে অধিক পেরেক ইত্যাদি মারা থেকেও বিরত থাকা উচিত। ব্যবহারকারীর সীমালংঘনের কারণে কোনো জিনিস নষ্ট হলে এর ক্ষতিপূরণ ভাড়াটিয়াকেই দিতে হবে। অবশ্য সীমালংঘন ছাড়া সাধারণ ব্যবহারের কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেলে নতুন পার্টস কিনে দেওয়া বা মেরামত করে দেওয়ার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। যেমন পানির কল নষ্ট হয়ে গেলে, বাথরুমের লোডাউন বা কোনো ফিটিংস নষ্ট হয়ে গেলে। তেমনি দরজা-জানালা, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনে কোনো সমস্যা হলে এগুলো ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্বও বাড়িওয়ালার। এগুলো ভাড়াটিয়ার উপর চাপানো যাবে না।
এ কথাও বুঝা দরকার যে, একটি জিনিস যে ভাড়াটিয়ার কাছে নষ্ট হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে এ ভাড়াটিয়ার একক ব্যবহারের কারণেই নষ্ট হয় না; বরং আগের ভাড়াটিয়ার দীর্ঘদিনের ব্যবহারও এর কারণ হয়ে থাকে। তাই কল এবং ফিটিংস ইত্যাদি লাগিয়ে দেওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়িওয়ালারই দায়িত্ব। এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে ভাড়াটিয়া থেকে তা আদায় করা অন্যায়। মনে রাখা দরকার, ভাড়া বস্তুর কোনো কিছু সাধারণ ব্যবহারে নষ্ট হলে তার মেরামত করা মালিকেরই দায়িত্বে।
বাড়ির মালিকগণ ভাড়াটিয়া থেকে অগ্রিম কিছু টাকা সিকিউরিটির জন্য নিয়ে থাকে। এই অগ্রিম টাকা আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। নিয়মের ভিন্নতার কারণে এর হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-
১. কারো এমন নিয়ম থাকে যে, এক বা দুই মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে। যা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষ দুই মাসের ভাড়া হিসেবে ধরা হবে। এক্ষেত্রে তা ফিকহে ইসলামীর দৃষ্টিতে অগ্রিম ভাড়া হিসেবে ধর্তব্য হবে। সিকিউরিটি মানি তথা বন্ধক হিসেবে গণ্য হবে না।
২. দোকান বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার জন্য দুই-তিন লাখ বা আরো বেশি টাকা অগ্রিম নেয়া হয়। এরপর মাসে মাসে কিছু কিছু করে সকল টাকা ভাড়ার সাথে কেটে নেয়। পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য হিসেবে কিছুই রাখা হয় না। এমনটি হলে এটাও অগ্রিম ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে। এই দুই ক্ষেত্রে অগ্রিম হিসাবে যা নেওয়া হয় সে টাকার মালিক বাড়িওয়ালাই হবে। সুতরাং এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে এবং এটি তার যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে। তাই যাকাতবর্ষ শেষে এ টাকা থেকে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তাকেই এর যাকাত দিতে হবে। ভাড়াটিয়াকে এর যাকাত দিতে হবে না।
৩. আর যদি অগ্রিম নেওয়া এই টাকা থেকে ভাড়া হিসাবে কোনো কিছু কাটা না হয় এবং চুক্তি শেষ হওয়ার আগের মাসগুলোর ভাড়া হিসাবেও গণ্য করা না হয়, বরং ভাড়াটিয়া বাড়ি ছাড়ার সময় তাকে এ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্ত করা হয় তাহলে এই টাকা সিকিউরিটি মানি বলে গণ্য হবে।
ফিক্বহী দৃষ্টিকোণ থেকে সিকিউরিটি মানি রাহান তথা বন্ধকী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। আর বন্ধকগ্রহীতার জন্য বন্ধকী বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। সে হিসেবে বাড়ির মালিকের জন্য এই অগ্রিম টাকা খরচ করা জায়েয নয়। সাধারণ নিয়মে টাকাগুলো নিজের কাছে বা ব্যাংকে রেখে দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু আজকাল অনেক বাড়িওয়ালা বন্ধকের উক্ত নিয়ম মেনে চলে না। বরং প্রায় সবাই এ টাকা খরচ করে ফেলে। জমা রাখে না। তাই কোনো কোনো ফকীহ এই খরচকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই টাকাকে বন্ধক না ধরে ঋণ বলতে চান। আর এটাকে ভাড়ার সাথে শর্ত না করে ভিন্নভাবে লেনদেন করতে বলেন। তাদের ভাষ্যমতে এভাবে করলে বাড়িওয়ালার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ হবে। অবশ্য অন্য অনেক ফহীহ এটাকে সিকিউরিটি তথা বন্ধকই বলেন। দলীলের দিক থেকে এ মতটিই শক্তিশালী।
নিজের জন্য ভাড়া নিয়ে মালিকের অনুমতি ব্যতীত অন্যকে ভাড়া দেওয়া ভাড়াটিয়ার জন্য জায়েয নেই। সুতরাং মালিকের অনুমতি ব্যতীত সাবলেট নেওয়া বা অন্যকে ভাড়া দেওয়া ভাড়াটিয়ার জন্য বৈধ নয়। তবে মালিক অনুমতি দিলে অসুবিধা নেই। আর নিজে ভাড়া নিয়ে পুরোটাই অন্যকে বেশি দামে ভাড়া দেওয়ার জন্য দু’টি শর্ত আছে। ১. এজন্য বাড়িওয়ালার অনুমতি নিতে হবে। ২. বেশি ভাড়া নিতে চাইলে ঐ বাড়িতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করতে হবে। যেমন ডেকোরেশন করা, দরজা বা টাইলস লাগানো ইত্যাদি। আর সংস্কারমূলক কাজ বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। নিজে ভাড়া নেওয়ার পর সংস্কারমূলক কোনো কাজ না করে বেশি টাকায় ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।