জুমবাংলা ডেস্ক : শক্ত হাতে সরকার পরিচালনা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে’ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি শক্ত হাতে আপনার সরকারকে পরিচালিত করুন। এই কথা কেউ যেনো না বলে, আপনি কোন পক্ষপাতিত্ব করছেন। সেকথা আমি শুনতে চাই না। আপনি অনেক বিখ্যাত মানুষ। সারাবিশ্বে আপনার নাম আছে। সেটা আপনি রাখবেন। সেটাই আমরা আপনার কাছ থেকে আশা করি। আমরা আশা করব, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দ্রুত ন্যুনতম সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং ভষ্যিতের জন্য সমৃদ্ধি আনবেন, এটাই আমরা আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি।
দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে, তর্ক-বির্তক বন্ধ করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্যে আমরা একটা গণতান্ত্রিক জায়গায় পৌঁছাতে পারি। ‘আমরা না কি শুধু নির্বাচন, নির্বাচন করছি, আমরা সংস্কার করতে চাই না’। এতো বড় মিথ্যা প্রচারণা তারা বিভিন্নভাবে চালাচ্ছে। কয়েকজন মানুষ, তারা বিএনপিকে টার্গেট করেছে। মিথ্যা ও অপ্রচারণা করে বিএনপিকে হেয় করতে চায়।
ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নতুন করে গড়ে তুলবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, দেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার- সেই সুযোগকে আজকে আবার ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।সেখান থেকে তিনি পরিকল্পনা ও চক্রান্ত করছেন, কি করে এই গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়া যায়, কি করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় এবং একটা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। তারই চক্রান্ত হিসেবে আজকে আমরা দেখছি, বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে একটা অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না করলে আমরা কোন মতেই একটা স্থিতিশীল অবস্থা পাবো না। সেজন্য আমরা বারবার বলে আসছি, দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটাই জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। আজকে সেই জায়গায় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তুলে একটা নৈরাজ্যের দিকে দেশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজকে একটা কালো দিন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য এবং যারা লড়াই করে স্বাধীনতাকে রক্ষা করে তাদের মনোবলকে ভেঙে দেয়ার জন্য ও জাতির মনোবলকে ভেঙে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের শক্ররা পরিকল্পিতভাবে একটি বিদ্রোহ ঘটিয়েছে বিডিআর-এর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে পরেই অত্যন্ত পরিকল্পনার সঙ্গে যারা বাংলাদেশের শক্র তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটিয়ে সেদিন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছে। এই যে একটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, আমার প্রশ্নটা ওই জায়গায়-সেদিন যিনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলেন, শেখ হাসিনা সেদিন কি ভূমিকা পালন করেছেন, সেদিন সেনা বাহিনী প্রধান কি ভূমিকা পালন করেছেন?
জাতির দুঃসময়ে সেনা বাহিনীর এগিয়ে আসা এবং তাদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী আমাদের শক্তি। আমরা তাদেরকে সব সময় দেখেছি, জাতির দুঃসময়ে তারা এগিয়ে আসেন। আজকে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রকৃতপক্ষে একটা দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এরআগে সকালে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষ্যে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানায় শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দু’দিন ধরে হত্যাযজ্ঞ চলা দুর্ভাগ্যজনক। তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যোগসাজসে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ঘটনাগুলো করতে দেয়া হয়। যে কারণে দু’দিন ধরে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।