আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া এক দশকের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাল্টিক দেশগুলোর একাধিক রাজনীতিকদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে মস্কো। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে এস্তোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থাটির দাবি, শুধু ইউক্রেনের ওপর প্রায় দুই বছর ধরে হামলা চালিয়ে রাশিয়া ক্ষান্ত হবে না, অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দিকেও সে দেশটির কুনজর রয়েছে। বিশেষ করে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে এমন সন্দেহ বেশ কিছুকাল ধরে দানা বাঁধছে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়েনিয়া রাশিয়ার পরবর্তী আগ্রাসনের শিকার হতে পারে, সেই আশঙ্কার নানা সংকেত দেখতে পাচ্ছে এই তিন দেশ।
সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি চালাচ্ছে মস্কো। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়া সামরিক বাহিনীতে সংস্কার চালিয়ে সেই প্রস্তুতি শুরু করছে।
এমন এক দিনে এস্তোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, যেদিন রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তিন বাল্টিক দেশের একাধিক নেতাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাইয়া কালাস ও রাষ্ট্রসচিব তাইমার পেটারকপ, লিথুয়েনিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী সিমোনাস কাইরিস ও লাটভিয়ার আগের সংসদের প্রায় ৬০ সদস্যের বিরুদ্ধে সোভিয়েত আমলের সৌধগুলো ধ্বংসের দায়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তিরা রাশিয়ায় প্রবেশ করলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে পারেন।
রাশিয়ার আইন অনুযায়ী সেই অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘ঐতিহাসিক স্মৃতি’ ধ্বংসের দায়ে কালাসকে পুলিশ খুঁজছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার পক্ষ থেকে তিন বাল্টিক দেশে সোভিয়েত আমলের বেশিরভাগ সৌধ ধ্বংস করা হয়েছে। তিন দেশের সরকারই সেগুলোকে রাশিয়ার প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
রাশিয়ার সিদ্ধান্তের পর কালাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘ক্রেমলিনের মাধ্যমে আমার ও অন্যান্যদের মুখ বন্ধ করার আশা করছে বটে, কিন্তু তাতে লাভ হবে না। আমি ইউক্রেনের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন চালিয়ে যাবো। ইউরোপের প্রতিরক্ষা বাড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করে যাবো।’
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে ন্যাটোর কিছু সদস্য দেশকে রক্ষা না করার যে হুমকি দিয়েছেন, সেই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।
এস্তোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়ার পক্ষে অবিলম্বে ইউক্রেনের পাশাপাশি ইউরোপের অন্য কোনো দেশের ওপর হামলার ক্ষমতা না থাকলেও আগামী এক দশকের মধ্যে সেরকম সংঘাতের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মস্কো। সোভিয়েত আমলের সেনাবাহিনীর মতো ক্ষমতা অর্জন করতে সামরিক সংস্কার চালানো হচ্ছে বলে সেই গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে। ফলে ইউরোপের সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকেও পালটা প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বলে রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সম্প্রতি ইউরোপের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষমতা দ্রুত বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের পক্ষে সওয়াল করছেন। বিশেষ করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন তরান্বিত করতে ইউরোপীয় স্তরে দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি।
ট্রাম্প সত্যি আবার প্রেসিডেন্ট হলে ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য বাইরে থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য না পেলে নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করতে হবে বলে শলৎস মনে করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।