সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ দেখা যাওয়ার পর থেকেই জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছুদিন আগে বিষধর এই সাপের বিচরণ চরাঞ্চলে থাকলেও এখন লোকালয়েও এর দেখা পাওয়া যায়। ফলে দাবানলের মত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে জনমনে।
জেলার হরিরামপুর উপজেলায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের কমড়ে অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গত ১৭ জুন অজানা এক বিষধর সাপের কামড়ে হরিরামপুরের গালা ইউনিয়নের কালই (মনিঋষি পাড়া) গ্রামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া ২০ জুন (বৃহস্পতিবার) সিংগাইরে সায়েস্তা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে সাপের কামড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ পাশে বেগুন খেত থেকে বেগুন আনতে গেলে তাকে বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকায় রেফার করে। ঢাকা নেয়ার পথে হেমায়েতপুরে তার মৃত্যু ঘটে। এরপর গত বুধবার দুপুরে হরিরামপুরের রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ে দুটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পায় স্থানীয়রা। এর আগে, জেলার সিংগাইর ও সাটুরিয়াতে রাসেল ভাইপার দেখা গেছে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্ট করেছেন নেটিজেনরা।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাগর সাহা জানান, বিভিন্ন সময় ফেসবুকে রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছি। এবার বাস্তবে এ সাপের দেখা মিলল। গতকাল দুপুরে নদীর পাড়ে হাটতে গিয়ে দেখি দুটি রাসেল’স ভাইপার সাপ। একটি নদী থেকে এলাকায় প্রবেশ করছে, অপরটি নদীর পাড়ে ভেসে রয়েছে। সাপটিকে তৎক্ষণাৎ পিটিয়ে মেরে ফেলেন লোকজন। কিন্তু পানিতে থাকা সাপটি স্রোতের সাথে ভেসে চলে যায়।
মানিকগঞ্জের বেউথা এলাকায় বসবাসকারী বিপ্লব হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী সাপে কাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সীমিত। রাসেল ভাইপারে কামড় দিলে নাকি ১০০ মিনিটের মধ্যে এর অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিতে হয়। বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা আছে। বর্ষা মৌসুম এসে গেছে। এই সময়ে এমনিতেই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এরমধ্যে যেভাবে রাসেল ভাইপার ছড়িয়ে পড়ার খবর শুনছি, তাতে বাচ্চাদের নিয়ে খুবই দুঃচিন্তায় আছি।
মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ভয়ঙ্কর এই সাপ নিধনে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। কিন্ত এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ নজরে পড়েনি।
আমলাম খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, দেখলাম মানিকগঞ্জের ডিসি মহোদয় রাসেল ভাইপার সাপের বিষয়ে একটি সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়েছেন। কিন্ত সেখানে সুনির্দিষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা নেই। দায়সাড়া এমন পোস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন বা রক্ষা করা যাবে কি?
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়েছে বলে শুনেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী সাপে কাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সীমিত। তবে জেলা মিটিংয়ে চাহিদার কথা উপস্থাপন করা হয়েছে আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পাব।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছি। কৃষকরা যেন খুব সাবধানতার সাথে ক্ষেতে কাজ করতে নামে এবং ক্ষেতে কাজ করার সময় গামবুট ব্যবহার করেন সেটাও বলেছি। কাউকে সাপে কামড় দিলে তারা যেন সাপুড়ে বা ওঝার কাছে না গিয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। চিকিৎসকদের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিভেনম রাখা হয়েছে।
বিষধর এই সাপ নিধনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিধন আসলে কোন সমাধান নয়। আমরা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলেছি। বেজির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বেজির সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়াতে পারলে প্রাকৃতিকভাবেই একটা ব্যালেন্স তৈরি হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।