জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। দেশজুড়ে এই সাপ নিয়ে নানান আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ে সচেতন হতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামূলক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোপ-জঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় থাকে। মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। মেটে রঙের হওয়ায় এই সাপ মাটির সঙ্গে সহজে মিশে থাকতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে কাছাকাছি গেলে, সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে।
এতে আরও বলা হয়, রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু সাপ। তাই এটি নদীর স্রোত ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে। এজন্য সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য বিবৃতিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সেবব নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-
কামড় এড়াতে করণীয়
* যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
* লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢোকাবেন না।
* সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট ও লম্বা প্যান্ট পরুন।
* রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চলাইট ব্যবহার করুন।
* বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
* পতিত গাছ, জ্বালানির লাকড়ি ও খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
* সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
* প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
রাসেলস ভাইপার কামড়ালে করণীয়
* যেখানে কামড় খেয়েছেন, শরীরের সেই জায়গাটি নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে কামড়ালে বসে পড়তে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে কামড়ালে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিরা নড়াচড়ায় মাংসপেশির সংকোচনের * ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছে ফেলতে হবে।
* শরীরে ঘড়ি, অলংকার, তাবিজ, তাগা থাকলে, সেটা খুলে ফেলুন।
* আক্রান্ত স্থান কাটবেন না, সুই ফোটাবেন না কিংবা কোনো রকম প্রলেপ বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
* সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
* যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যান।
* আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়।
প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়
বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ইগল, সারস, মদনটাক পাখি এবং কিছু প্রজাতির সাপও রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্য প্রাণী মানুষ নির্বিচার হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্য প্রাণী দেখলেই অকারণে হত্যা ও আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মনে রাখা প্রয়োজন, রাসেলস ভাইপার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী একটি সংরক্ষিত প্রাণী। এই সাপ ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয় অনেক। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।