চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার একটি মাছঘাটে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলেছে।
সাপটি আক্রমণ করতে এলে তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষায় সাপটি মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।
গতকাল (২৩ জুন) দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের তমরদ্দি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বছর ১২ ডিসেম্বর হাতিয়া উপজেলা চানন্দী ইউনিয়নে সাঈদপুর গ্রামের আজাদের বাড়ির পাশে ধানখেতে থেকে একটি রাসেলস ভাইফার সাপ ধরা হয়েছিলো। সাপটি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মাছঘাটের দায়িত্বে থাকা থাকা আলাউদ্দিন ও মেহেরাজ বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক রাত দেড়টার সময় একটা লোক নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে বাজারে যাচ্ছিলেন। তখন রাসেলস ভাইপার সাপটি দেখতে পান। সাপটি তাকে আক্রমণ করতে এলে সাথে সাথে লোকটি চিৎকার চেঁচামেচি করে অনেক লোক জড়ো করে ফেলেন। তখন তারা সাপটিকে ঘিরে ফেলে এবং আক্রমণ করতে এলে মেরে ফেলা হয়।
মিলন হোসেন নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপ তমরদ্দি মাছঘাটে এসেছে। বিভিন্ন খবরে এমনিতেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে আছি। নিজ এলাকায় এই সাপটি দেখে আমরা আরও আতঙ্কিত।
জানা যায়, রাসেলস ভাইপার সাপটি খুবই বিষধর। ২০১৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বরেন্দ্র গ্রামে এক কৃষককে এবং গত বছর রাজশাহীর তানোর এবং নওগাঁর ধামইরহাটে আরও দুইজনকে এই সাপটি কামড় দেয়। চিকিৎসাধীন থাকার পরও তাদের শরীরে পচন ধরে যায়। পচন ধরা অংশ কেটে ফেলার পরও তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপটি খুবই বিষধর এবং দুর্লভ সাপ। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় এটি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি নোয়াখালীতেও দেখা গেল। তমরদ্দি মাছ ঘাটে পিটিয়ে মারা সাপটি রাসেলস ভাইপার। এর আগে ডিসেম্বর মাসে প্রথম হাতিয়ায় সাপটি দেখা মেলে। আমরা জীবিত উদ্ধার করে গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছিলাম। এই ধরনের বিষধর সাপ দেখতে পেলে বিশেষজ্ঞদের জানানোর পরামর্শ দিচ্ছি। সাধারণ মানুষকে সাপের কাছে না যাওয়ার অনুরোধ করছি।
এদিকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে রাসেলস ভাইপার সন্দেহে বেশ কয়েকটি সাপ পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। সব মিলিয়ে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় বিষাক্ত সাপ রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল ও আট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম মজুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে হাতিয়ায় ৫০ ভায়াল (১০ ইনজেকশনে এক ভায়াল) মজুত রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শাজাহান সাজু বলেন, শুক্রবার রাতে আমাদের পাশের এলাকা চরকাঁকড়ার উকিলপাড়া এলাকার মসজিদের পাশে মুসল্লিরা একটি সাপ পিটিয়ে মারে, যা দেখতে অবিকল রাসেলস ভাইপারের মতো। এরপর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হাতিয়ার বাসিন্দা আমির হামজা বলেন, আজ সকালে উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের কাজীর বাজার এলাকায় একটি সাপ পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাতিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাম কানু দাশের বাড়িতে একটি সাপ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর সাপ দুটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, প্রত্যেক উপজেলা হাসপাতালসহ নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম মজুত রাখা হয়েছে। সাপ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, প্রয়োজন সচেতনতা। সাপ কাটলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। তবে ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করা যাবে না। সাপে কাটা স্থানে কোনো মলম বা মালিশ লাগানো উচিত না। অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।