জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের দংশনে সরকারি হিসাবে মারা গেছেন অন্তত পাঁচজন। এর আগে ২০২১ সালেও ব্যাপক আলোচনায় ছিল রাসেলস ভাইপার। ওই বছর দেশের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে এই সাপের দংশনে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। এই সাপ আলোচনায় থাকার কারণ হলো বাংলাদেশে দেখা যাওয়া সাপগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষধর বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন।
কেবল বাংলাদেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারেও এই সাপের বেশ উপদ্রব আছে। দেশটিতে গত মে আসে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, দেশটির স্থানীয় ‘রাখাইন’ (মানজানো কলা, যা অনেকটা সবরি কলার মতো) কলা গাছের আঠা এই সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে দাবিটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ড. নাপাত রত্নারথর্নের সঙ্গে যোগাযোগ করে এএফপি। তিনি বলেন, রাখাইন কলা গাছের আঠা রাসেলস ভাইপারের দংশনের চিকিৎসায় কার্যকর দাবির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। যদিও কিছু গবেষণায় কলার ঔষধি গুণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনোটিই সাপের বিষের বিরুদ্ধে কলার আঠার কার্যকারিতা চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, কলার আঠার মতো অপ্রমাণিত দাওয়া অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে এবং গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্প দংশন বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড উইলিয়ামসও জানান, দাবিটির পক্ষে কোনো গবেষণালব্ধ প্রমাণ নেই। সাপের দংশনের একমাত্র কার্যকর প্রতিষেধক হলো, প্রাণীর প্লাজমার ইমিউনোগ্লোবুলিন থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিভেনম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা নিয়ে একটি বই লিখেছেন। বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, উপযুক্ত চিকিৎসা হলে গোখরা সাপের দংশনের ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের দংশনের ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। সাপের দংশনের পর দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, এর অ্যান্টিবডি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্ষা পায়। সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেকে বিষধর সাপের কামড় খেয়ে মারা যান শুধু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। বিশেষ করে হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না থাকার কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাই বিষধর সাপের কামড়ের চিকিৎসায় অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।