জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপিত বৃহত্তম ভেনম রিসার্চ সেন্টারে তৈরি হয় বিষধর সাপের প্রতিষেধক। বিদ্যমান এন্টিভেনম ভ্যাকসিন দিয়েও বর্তমানে আলোচিত রাসেলস ভাইপারে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে সেখানে রাসেলস ভাইপারসসহ চার ধরনের সাপ থেকে বিষ নিয়ে এন্টিভেনম তৈরি করা হচ্ছে। তবে রাসেলস ভাইপারস সাপের বিষ নিয়েও এন্টিভেনম তৈরির পৃথক একটি গবেষণা চলছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে চমেকের পুরনো একাডেমিক ভবনের নিচতলায় স্থাপিত হয় চমেক হাসপাতাল ভেনম রিসার্চ সেন্টার। এখানে দেশের বিষধর সাপগুলোর বিষের বিরুদ্ধে এন্টিভেনম তৈরি করা হয়। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বৈজ্ঞানিক প্রকল্প। এর অধীনে নোসেলেট কোবরা, বিনোসেলেট কোবরা, বানডেড ক্রাইট, ডব্লিউএলপি ভাইপার, এসটিপি ভাইপার, রাসেলস ভাইপার, জি ব্ল্যাক ক্রাইট, কমন ক্রাইট, লাল গলার কিলব্ল্যাক নামে বিষধর সাপ লালন-পালন করা হচ্ছে। সেখানে দেশে পাওয়া যায় এমন ১১ প্রজাতির প্রায় ৩৫০টিরও বেশি সাপের বিষ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ প্রজাতির সাপের ক্যারেক্টারাইজেশনের কাজ শেষ হয়েছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ও চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, বর্তমানে সাপে কামড়ের চিকিৎসায় যে প্রতিষেধক ব্যবহৃত হয়, রাসেলস ভাইপারেও সেটি ব্যবহার করা যাবে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আক্রান্ত ব্যক্তিকে কত দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়েছে, সেটা। বিলম্ব করলে, অপচিকিৎসার আশ্রয় নিয়ে কিংবা যথাসময়ে না আনলে বিপদ ঘটবেই। যথাসময়ে হাসপাতালে আনলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠে।
ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সহযোগী গবেষক মিজানুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো রাসেলস ভাইপারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আতঙ্কের কিছু নেই। বিদ্যমান এন্টিভেনম রাসেলস বাইপারে আক্রান্তের চিকিৎসায় কার্যকর। বিভিন্নভাবে যা শোনা যাচ্ছে তা সঠিক নয়। সাপটিকে কেউ বিরক্ত না করলে সেও কিছু করে না। তবুও সবার সতর্ক থাকা উচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে কিছু ভুল কথা-তথ্য প্রচার হচ্ছে। তবুও এটা নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। সঙ্গে মানুষকে সতর্ক-সচেতন করতে সরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু অতিরঞ্জিত কথা প্রচার হচ্ছে, যা মানুষকে আতঙ্কিত করছে। অথচ দেশে এর চেয়ে বিষধর সাপও আছে। এগুলো কামড় দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিলে রোগী ভালোও হচ্ছে। তাছাড়া প্রাকৃতিকগত কারণে বর্ষাকালে সাপ দেখা যেতে পারে।
সাপ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, না চিনে ভীতি থেকে যেনতেন সাপ মেরে ফেলা উচিত নয়। তাই এ সাপকে চিনে রাখা দরকার। প্রথমত, এটার সঙ্গে অজগর, স্যান্ডবোয়ারের মিল আছে।
কিন্তু একটু খেয়াল করলেই গায়ের গোল গোল রিংয়ের ভিন্নতা চোখে পড়বে। রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার গায়ে চাকা গোল গোল চিহ্নগুলো আলাদা আলাদা। অজগরের চাকা গোল, গোলগুলো নেটের মতো, একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। এই সাপ দৌড়ে তাড়া করে না, বাসায় এসে কামড়াবে না। না চিনে ভীতি থেকে যেনতেন সাপ মেরে ফেললে খাদ্য-শিকলে প্রভাব পড়বে। সাধারণত সব সাপ ইঁদুর খায় না, এরা খায়। ইঁদুর বেড়ে গেলে সেটা জীবনযাত্রাকে বিষিয়ে তুলে। বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।