আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার ঢল নামিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়া তাদের এমন পদক্ষেপের ব্যাপারে বার বার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে। পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। শুরুর দিকে কিয়েভ-মস্কোর মধ্যে আলোচনা চললেও এখন তা থমকে গেছে।
এদিকে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে ফের তীব্র হামলা চালাচ্ছে পুতিন প্রশাসন। দুই পক্ষের মধ্যে চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত বেসামরিক নাগরিক। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে কোন পদক্ষেপে থামতে পারে এই সংঘাত? অনেকে মনে করছেন শান্তি চুক্তিই হতে পারে এর একমাত্র সমাধান।
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে। একদিকে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, অন্যদিকে ইউক্রেনকে অব্যাহত সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের এই কৌশল ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে একটি শান্তি চুক্তি প্রয়োজন, যা সহজেই সম্ভব। এর জন্য ন্যাটো ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দিতে হবে। তবে এমন বিষয় বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে আলোচনা অচলাবস্থায় রয়েছে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পুতিন পশ্চিমা নেতাদের কাছে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধসহ কিছু দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই পুতিনের দাবির বিষয়টি উপেক্ষা করে আসছে। তবে মার্কিন এমন নীতি পুনরায় পর্যালোচনা করার এখনই ভালো সময় হতে পারে। শান্তি আলোচনা সফল করতে পুতিনকেও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।
ইউক্রেনে অস্ত্রের সরবরাহ ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও আন্তর্জাতিক পরিসরে তেমন ভূমিকা রাখছে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ফলে বৈশ্বিকভাবে রাশিয়া অগ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে উন্নয়নশীল বিশ্বে। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে ৯৩টি দেশ পশ্চিমাদের পক্ষে অবস্থান নিলেও বিরত থাকে ১০০ দেশ। এসব দেশে বিশ্বের ৭৬ শতাংশ মানুষের বসবাস।
নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে ওয়াশিংটনের কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এর মাধ্যমে রাশিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। যদিও নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রভাব পড়ছে। তবে আশার কথা হলো এ পদক্ষেপ রাশিয়াকে আলোচনায় বসতে চাপ দিতে পারে।
চীনসহ অনেক দেশই ন্যাটোর সম্প্রসারণ চায় না। তাছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশই যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় নয় বরং, শান্তি চায়।
যুক্তরাষ্ট্র পুতিনকে সামরিকভাবে পরাজিত দেখতে বেশি পছন্দ করবে। তাছাড়া ন্যাটোর মাধ্যমে রুশ বাহিনীকে পর্যদুস্ত করতে চাইবে। তবে এটাও মানতে হবে যে, এমন প্রক্রিয়ায় ইউক্রেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়াও কোনোভাবে পরাজয় বা পিছু হাঁটবে না। বরং পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে। এভাবে ন্যাটোর মাধ্যমে রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করা গেলেও ইউক্রেনের শেষ রক্ষা হবে না।
সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে ইউক্রেনকে রক্ষা করা যাবে না। একমাত্র শান্তি চুক্তিই পারে ইউক্রেনের অস্তিত্ব বাঁচানোর শেষ কৌশল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানা এক মাস ধরে উত্তেজনা চলার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। দুই মাসের বেশি সময় ধরে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। দুই পক্ষের লড়াইয়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটার পাশাপাশি ইউক্রেন ছেড়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ।
সিএনএনে প্রকাশিত মতামতের আলোকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।