বিনোদন ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরেই সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করছেন ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। হঠাৎ দেশে আসেন, তাও অল্প ক’দিনের জন্য। এই সময়টা শুধুমাত্র প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন। শাবানার সান্নিধ্য পাওয়াটা সত্যিই দুষ্কর।
তবে কোনো ধরনের সুযোগ তৈরি হলে সিনে-সংশ্লিষ্টদের কেউই গুণী এই অভিনয়শিল্পীর সান্নিধ্য পাওয়া থেকে নিজেদের বঞ্চিত করতে চান না। যেমনটা এবার ঘটেছে অভিনেতা মিশা সওদাগরের বেলায়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে সম্প্রতি আমেরিকায় গেলে সুযোগ হয় শাবানার সঙ্গে দেখা করার। ছুটে যান নিউজার্সিতে অভিনেত্রীর বাড়িতে। লম্বা সময় ধরে আড্ডা দেন, খাওয়াদাওয়া করেন।
অভিনয়ের সূত্রে শাবানার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় মিশা সওদাগরের। একসময় তা পেশাগত সম্পর্ককে ছাপিয়ে যায়, হয়ে ওঠে অনেক বেশি পারিবারিক। শাবানা ও তার প্রযোজক স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের স্নেহভাজনদের একজন মিশা সওদাগর। যে কারণে দেশের বাইরে থাকলেও তাদের মধ্যে ফোনে কথাবার্তা হয়। দেশে এলেও শাবানার বাসায় যাওয়া হয় মিশার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এই দেখা করাটা তারই একরকম ধারাবাহিকতা বলে মনে করেন মিশা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই অভিনেতা বলেন, ‘শাবানা আপা আমার জীবনে কী, তা আমিই জানি। চার বছর ধরে দেশে আসেননি তিনি। কথা হলেও আপার সঙ্গে দেখা হচ্ছিল না। মনটা চাইছিল, আপা-দুলাভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার। এবার সে সুযোগটা হয়ে কাজে লাগল। এত দিন পর তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে অসাধারণ সময় কাটল। বাসায় চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি। আপা তো আমি যাব বলে অনেক কিছুই রান্না করেছেন। নিজের হাতে খাবার তুলে খাইয়েছেন।’
জানা গেছে, পরিবারকে সময় দেওয়া ছাড়াও একটি সিনেমার শুটিং, ডাবিং ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর আমেরিকায় উড়াল দেন মিশা সওদাগর। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন। এর মধ্যে যোগাযোগ হয় শাবানার সঙ্গেও। মিশাকে তার বাড়িতে দাওয়াত করেন অভিনেত্রী। ২৮ ডিসেম্বর মিশা যান শাবানার বাসায়।
মিশা জানান, প্রিয় অভিনেত্রীর তার জন্য পোলাও, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, বেগুন ভাজি, সবজি ও ডাল রান্না করেছিলেন। বলেন, ‘আপা নিজেই রান্না করেছেন। আপার রান্না তো অতুলনীয়। বড় বোন হয়ে তিনি পরম মমতায় পাতে তুলে খাবার খাইয়ে দিয়েছেন, এ আন্তরিকতার অনুভূতি সত্যিই অন্য রকম।’
আড্ডায় কী কী প্রসঙ্গে কথা হয়েছে- জানতে চাইলে মিশা সওদাগর বলেন, ‘আপার সঙ্গে যখনই কথা হয়, সিনেমা নিয়ে তো আলোচনা হয়। এবারও তিনি সবার খোঁজখবর নিলেন। দেশের চলচ্চিত্র যে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম কুড়াচ্ছে, এসব তাকে গর্বিত করেছে বলে জানালেন।’
উল্লেখ্য, মাত্র ৮ বছর বয়সে সিনেমায় নাম লেখান শাবানা। নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেন তিনি। এরপর ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’তে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় শুরু। ক্যারিয়ারে ২৯৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ১৭ বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে আছেন গুণী এই অভিনয়শিল্পী। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হুট করেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। অভিনয়কে বিদায় জানালেও কোটি বাঙালির হৃদয়ে এখনও অভিনয়ের রানি হয়ে আছেন শাবানা।
এদিকে, ১৯৮৬ সালে বিএফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা দিয়ে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন মিশা সওদাগর। পরিচালক ছটকু আহমেদের ‘চেতনা’ তার প্রথম অভিনীত সিনেমা। এতে তিনি নায়কের চরিত্রে অভিনয় করলেও নিজেকে খলনায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিশার মতে, শাবানা প্রযোজিত ‘স্বামী কেন আসামী’ তাকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।
মিশা বললেন, ‘শাবানা আপার কাছে আমার আজন্ম ঋণ। তিনি আমাকে আজকের মিশা সওদাগর বানানোর সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগটা মিস করতে চাইনি। আমার কাছে মনে হয়, আপা ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে যতটা সময় থাকি, অনেক কিছু শিখি। তার সঙ্গে কাটানো সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।