বিনোদন ডেস্ক : ঢাকাই চলচ্চিত্রের গুণী নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তার হাত ধরে অনেক শিল্পী ও নির্মাতা তৈরি হয়েছেন। সম্প্রতি জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। তার শরীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে ছুটে যান নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, মিজানুর রহমান মিজান, সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর, অভিনয়শিল্পী সনি রহমান। এ সময় খোশ-গল্প আর স্মৃতির সাগরে ডুবে যান নন্দিত এই পরিচালক।
সোনালি সময়ের চলচ্চিত্রের পেছনের গল্প বুঁদ হয়ে শুনছিলেন সবাই। গল্পে উঠে আসে কিংবদন্তি নায়িকা শাবানার বিপরীতে নায়ক জসিমের অভিনয়ের পেছনের গল্প। নায়ক জসিম তার ক্যারিয়ার শুরু করেন এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে। মাত্র ১০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন তিনি। সেখান থেকে তাকে চলচ্চিত্রের নায়ক বানিয়েছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।
শাবানার বিপরীতে কাজ করার সুযোগও করে দেওয়ার গল্পটা কেমন ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে এই পরিচালক বলেন, ‘একবার জসিমের বাসায় বসে আছি। জসিম বললেন, ঝন্টু ভাই আমি এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় করছি। আমাকে একজন বড় পরিচালক বলেছেন, কালকে বিকালে আপনার শুটিং আছে চলে আইসো এফডিসিতে। আমি জানতে চাইলাম আমার শট কি? তিনি জানালেন, সিনেমার নায়িকা শাবানাকে তোমার কাঁধে তুলে বসের (মেইন ভিলেন) সামনে রাখতে হবে। এটাই তোমার শট। এত বড় নায়িকাকে কাঁধে তুলবো! এটা আমার জন্য বিরাট বিষয়। পরের দিন সকালে বাজারে গিয়ে তিনটি লাক্স সাবান কিনেছি। শেভ করে ভালো করে গোসল করেছি। দুপুরে আবার গোসল করেছি। যাতে করে আমার শরীর থেকে কোন গন্ধ-টন্ধ না বের হয়।’
শাবানাকে না জানিয়ে তার বিপরীতে জসিমকে নেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব কথা শুনে বললাম, আপনাকে আমি একটা সারপ্রাইজ দেব। পরশু দিন নতুন একটা সিনেমায় আপনাকে নিচ্ছি। আলমগীর, সুচরিতা, শাবানা এবং আপনি আছেন। চলে আসবেন। শুটিংয়ে আসলেন। ড্রেস পরে জসিম রেডি। শাবানা ম্যাডামকে বললাম, আপনার ডায়লগ— আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আমার প্রথম প্রেম। উনি বললেন, এটা ব্যাপার না রেডি করেন আমি বলে দিচ্ছি। আমি রেডি আছি আপনি আলমগীরকে ডাকেন। এরপর জসিমকে সামনে দাঁড় করিয়ে বললাম, ম্যাডাম শট দেন। বলার সঙ্গে সঙ্গে শাবানা ম্যাডাম আমার দিকে তাকালেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে শাবানা ম্যাডামকে একটু পাশে নিয়ে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম আমি আলমগীরের সঙ্গে আপনাকে রাখিনি, জসিমের সঙ্গে রেখেছি। কিন্তু বিষয়টি আপনাকে বলিনি। এটা আমার ঠিক হয়নি। আপনি যদি বলেন, আমি সরি বলবো। তখন শাবানা ম্যাডাম বললেন, না সরি বলার দরকার নেই চলেন!’
শাবানার সামনে দাঁড়িয়ে হতবাক জসিম। তা স্মরণ করে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘সেট রেডি করে টেক করার জন্য বলি। এদিকে জসিম কিছুই জানেন না। শাবানা জসিমের হাত ধরে বললেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। জসিম সঙ্গে সঙ্গে বললেন, এই ক্যামেরা কাট কাট। এটা ভুল হচ্ছে। আমার কাছে এসে জসিম বললেন, ম্যাডাম আমারে কি কইতাছে? আমি বললাম চুপ থাকেন ওখানে যান। আমাকে টান দিয়ে ফ্লোরের বাইরে নিয়ে বললেন, ভুল হইতাছে না তো। আমি বললাম, আরে না, ভুল হচ্ছে না। এটাই। আমি তার সঙ্গে আপনাকে রেখেছি। শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। এ সিনেমা মুক্তির পর দারুণ হিট হয়েছিল।’
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু জসিমকে ‘ওমর শরীফ’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে কাস্ট করেন, তারপর জসিমকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন এই নায়ক।
এই তারকদের পর্দার প্রেম গড়িয়েছিল বাস্তবেও, তবে মেলেনি একসাথে থাকার সুখ
ঢাকাই সিনেমার অন্যতম সফল ও কালজয়ী নায়ক জসিম। আশি ও নব্বই দশকে তিনি দাপটের সঙ্গে রূপালি পর্দা মাতিয়েছেন। একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা দিয়ে নিজেকে সফল নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাকে দেশের অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়।
সূত্র : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।