আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ওমরাহ পালন করতে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এসে অভিভূত হয়ে পড়েছেন ভারতের তামিল মটিভেশনাল স্পিকার ও শিক্ষাকর্মী সবরিমালা জয়কান্তন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ফাতিমা সবরিমালা নাম ধারণ করেন। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ইহরামের কাপড় পরে তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা দেন। হায়দারাবাদ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সিয়াসাত ডেইলি সূত্রে এ খবর জানা যায়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া এক ভিডিওতে সবরিমালাকে কাবা প্রাঙ্গণের সামনে কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে দেখা যায়। তাতে তিনি জীবনের প্রথম কাবাঘর দেখার আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মক্কা ভ্রমণকালে তিনি পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং হলি কিসওয়া পরিদর্শন করেন।
মক্কা নগরীতে প্রথমবার এসে ফাতিমা বলেন, ‘আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি, বিশ্বের মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত ঘৃণার ছড়াছড়ি কেন? একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে আমি পবিত্র কোরআন পাঠ শুরু করি। এরপর নিজেই সত্য উপলব্ধি করি। এখন আমি নিজেরও চেয়েও বেশি ইসলামকে ভালোবাসি। ’
মুসলিমদের কোরআন পাঠের আহ্বান জানিয়ে ফাতিমা বলেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান ও সম্মানিত মনে করি। মানুষের কাছে খুবই চমৎকার এ গ্রন্থ আছে। কেন আপনারা তা ঘরের ভেতর লুকিয়ে রেখেছেন? গ্রন্থটি সারাবিশ্বের পাঠ করা উচিত। ’
জানা যায়, সবরিমালা ১৯৮২ সালের ২৬ ডিসেম্বর তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই প্রদেশের আলাঘরসামিতে জন্মগ্রহণ করেন। জয়কান্তনের সঙ্গে বিয়ের পর তাদের জয়চোলান নামে এক ছেলে আছে হয়। ১৯৮২ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাদুরাইতে আলাঘরসামি এবং কালাইয়ারসিতে জন্মগ্রহণ করেন সবরিমালা। পড়াশোনা সম্পন্ন করে ২০০২ সালে কুড্ডালোর জেলার কাট্টুমান্নারগুড়ির কাছে এলেরি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকতার সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তার কাছে চাকরির চেয়েও জাতি গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি পুরো ভারতে একক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের আন্দোলন শুরু করেন।
ভারতের প্রচলিত এনইইটি ও সর্বসাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই দাবি করে সবরিমালা বলেন, ভারতে যেহেতু কোনো সার্বজনীন সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নেই, তাহলে কীভাবে সবার জন্য এনইইটি পরীক্ষা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?’ এমনকি তিনি পরীক্ষার বিরুদ্ধে অনশন করে জোর দাবি জানান, ভারতে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা উচিত।
২০০২ সাল থেকে সবরিমালা সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর তিনি শিক্ষার সমতা এবং মেয়ে ও নারীদের অধিকার সুরক্ষায় লড়াই শুরু করেন। দেশে একক শিক্ষাব্যবস্থা এবং মেয়ে শিশুদের অধিকার আদায়ে তামিলনাড়ুতে ‘ভিশন ২০৪০’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন তিনি।
সমাজের নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর সহিংসতা বন্ধে নানাভাবে লড়াই করে যান সবরিমালা। মেয়ে শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছয় লাখের বেশি মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ বিষয়ে একটি বই রচনা করে তিনি পাঁচ হাজার বিদ্যালয়ে তা বিতরণ করেন। কোয়েম্বাটুর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মারা যাওয়া মেয়ে রিথনিয়াশ্রীর পরিবারের জন্য এক লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
A famous Tamil Nadu Social Activist & Teacher Sabarimala accepted Islam.
Now Fathima Sabarimala.
Hatred towards Indian Muslims led her to read the Quran & then embrace Islam.
She Said ,“Now I love Islam more than Myself “
Allahu akbar. pic.twitter.com/cVr7cy11MM— Mohammed Habeeb Ur Rehman (@Habeebinamdar) April 23, 2022
মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে দুই হাজারেরও বেশি মঞ্চে অংশগ্রহণ করেন শবরিমালা এবং দুই শয়ের বেশি প্ল্যাটফর্মে প্যানেল স্পিকার ছিলেন। ভ্যান্ডার টিভি, নিউজ সেভেন টিভি, জয়া টিভিসহ বিভিন্ন টিভির অনুষ্ঠান পরিচালক ছিলেন তিনি। তার এসব বক্তৃতা ব্যবসার জন্য নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বলে জানান তিনি। মঞ্চে বক্ততার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করেন তিনি। সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাবলিক স্পিকারে পরিণত করতে কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন তিনি।
সূত্র : দ্য সিয়াসাত ডেইলি ও দ্য হিন্দুস্তান গেজেট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।